Wednesday, October 21, 2015

দাস কাব্য!

মানুষ অভ্যাসের দাস নাকি অভ্যাস মানুষের দাস তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দাস মানুষই যে আমাদের এই প্রগতির গতি দাতা ও ভিত্তি নির্মাতা তা সর্বকালের প্রমাণিত সত্যি। সভ্যতার ঊষা লগ্ন থেকেই আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা মূলত দাস নির্ভর ছিল, সামন্ত প্রভুদের প্রয়োজনে ভূমি দাসদের উন্মেষ ঘটলেও শিল্প বিপ্লব পরবর্তীতে এই প্রথায় কিছু পরিবর্তন আসে, আস্তে আস্তে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষিতে নগর কেন্দ্রিক শ্রম বাজার বিকশিত হয়৷ সামন্ত প্রভুদের জায়গায় শিল্পপতি নামে নতুন প্রভুর সৃষ্টি হয়। এই প্রভুদের প্রয়োজন থেকেই শ্রমিক নামক শিল্প দাসদের জন্ম।

পূর্বতন দাস প্রথা সামন্ত যুগের কৃষি উৎপাদনের চাহিদা মেটালেও এই নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন দাসের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ সামন্ত দাসদের চেয়ে শিল্প দাসদের ভাগ্য কিছুটা ভাল ছিল, অন্তত তাদের স্বীকৃত কিছু নির্দিষ্ট অধিকার ছিল নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তবে এক্ষেত্রে অধিকার বা দায়িত্বের বিষয়ে তাদের নিজেদের পছন্দের তেমন কোন সুযোগ ছিল না, এমন কি চুক্তির চেয়ে বেশী দায়িত্ব পালনে বাধ্য হলেও প্রাপ্য অধিকার তো দূরে থাক প্রভুদের স্বেচ্ছা ঘোষিত সুযোগও কখনও পায়নি৷ তুলনা মূলক সরল কিন্তু বড় বড় যন্ত্র নির্ভর কারখানাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীভূত শ্রমিক কলোনির বিকাশ ঘটে।

উনবিংশ শতাব্দীর গোরা থেকেই আমাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে আর তার ফলে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন জটিল যন্ত্রের বিকাশ সামগ্রিক উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। জটিল যন্ত্র পরিচালনা আর বিশাল উৎপাদন ব্যবস্থাপনার জন্য কেবল কায়িক শ্রম নয়, বিশেষ দক্ষতার প্রশিক্ষিত দাসের প্রয়োজন থেকেই নতুন আরেক ধরনের দাসের উন্মেষ ঘটে, আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক গুচ্ছ পূঁজি দাসের উন্মেষ ঘটে, এরা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও সামগ্রিক ভাবে ‘চাকুরে’ নামে পরিচিত, প্রশিক্ষিত এই দাসদের দক্ষতা ও একাগ্রতায় পূঁজি ও প্রভুদের মেদ দ্রুত ক্রমবর্ধমান। বিংশ শতাব্দীর গোরা থেকেই পূঁজি প্রাচুর্য আর অস্ত্রের সমন্বয়ে মানুষকে ভোগ লিপ্সার মায়া জালে এক অদৃশ্য দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে জগতটাই দাসত্বের স্থায়ী অবকাঠামো হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে যেখানে জন্মিলে দাসত্ব অবধারিত। জয় হোক পূঁজির, জয় হোক ক্ষমতার, জয় হোক শয়তানের আর জয় হোক দাসত্বের।।।

No comments:

Post a Comment