Wednesday, October 21, 2015

জনগনের মুরগী আর ঈশ্বরের শেয়াল!

 মানব ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাসঈশ্বর ভাগ্য নামক মুরগীটি পুরে রেখেছেন অর্থনীতির খাঁচায় যা রয়েছে রাজনীতিবিদ নামক শেয়ালদের জিম্মায় আর ক্ষমতা নামক শয়তানের অধীনে।

জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্বেষা মূলত প্রকৃতির দূর্বোধ্য জটিল নিয়মের সরলীকৃত এবং সার্বজনীন উত্তর জানা এবং তা মানব কল্যাণে ব্যবহার করা। আর এই উত্তর খোঁজার কাজটিকে আরও সহজীকরনের লক্ষ্যেই নানা শাখা-উপশাখায় বিভক্ত করা হয়েছে। সমস্ত বিজ্ঞানের ক্ষমতাকেই মানবতার পক্ষে বা বিপক্ষে ব্যাবহার করা যায় আর বাস্তবে ঘটেছেও তাই, পরমানু বিজ্ঞান আক্ষরিক অর্থেই এর জ্বলন্ত উদাহরন। বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে দুই পা এগিয়ে দিলে আবার মানবতাকে এক পা পিছিয়েও দিয়েছে। বিজ্ঞান আর মানবতার এই দ্বন্দের নেট ফলাফলই প্রগতি যা নিরুপন করে সভ্যতার গতি ও প্রকৃতি, আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম কেবল মাত্র অর্থনীতি এর ব্যাতিক্রম, যদিও বর্তমানে অর্থনীতি মানেই পূঁজিবাদী অর্থনীতি! গনতন্ত্রে 'জনগন' আর ধনতন্ত্রে 'বাজার' যত নষ্টের গোরা! শিল্প বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে 'ল্যান্ড-লেবার-ক্যাপিটাল' নির্ভর উৎপাদন কাঠামোর সূত্রপাত হলেও ক্ষমতা ও অস্ত্রের অর্বাচিন ও অযাচিত ব্যবহারে তা খুব শিঘ্রই বস্তুত পক্ষে কেবল মাত্র ক্যাপিটাল নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন কাঠামো হিসাবে বিকশিত হতে থাকে যেখানে ‘ল্যান্ড-লেবার’ এর ব্যবহার থাকলেও ভূমিকা থাকে না, ক্যাপিটাল একাই ক্রমান্বয়ে সসস্ত্র ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। এর প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসাবে মানুব জীবন ঈশ্বরকে তথা পুঁজিকে আবর্তন করে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়। ইলেকট্রনিক্স বিজ্ঞানের রকেট গতির বিকাশে আমাদের মৌলিক উৎপাদন কাঠামো আমুল বদলে গেলেও অর্থনীতির তাত্ত্বিক কাঠামো এখনও এডাম স্মীথ এর সেই ভ্রান্তিকর ‘ওয়েল্থ অফ নেশন’ আর বায়বীয় ‘মোরাল সেন্টিমেন্ট’ এর গোঁজামিল নির্ভর, কারণ তাতেই পুঁজি ও ক্ষমতার লাভ।
তুলনামুলক ভাবে অর্থনীতি মৌলিক বিজ্ঞানের নবীন শাখা, আর এর জন্ম, উন্মেষ বা বিকাশ জনকল্যাণে বা জনপ্রয়োজনে ঘটেনি, বরং তা পরিকল্পিত ভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে জনধোকা দিতে, সামষ্টিক বঞ্চনাকে ব্যাক্তিক সমৃদ্ধির সোপান হিসেবে, আর সে জন্যই জগতের সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সঠিকতা পর্যবেক্ষক নিরপেক্ষ ভাবে নিরুপন করা গেলেও 'অর্থনীতি বড়ই জটিল বিষয়' জাতীয় ধোঁয়াসার জন্য এর তত্ত্বের সঠিকতা নিরুপনের জন্য লাগে 'বিশেষজ্ঞ' পর্যবেক্ষক যারা অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাজারে পরিচিত এবং নানা মুনির মতাদর্শে লালিত ও নানা বেপারীর হালুয়াতে পালিত। বেপারটা আসলে গোপাল ভাঁড়ের 'চোপর' দেখানোর মতই যারা দেখতে পাবে না তারা 'জারজ'! গুনাগুন ও বৈশিষ্টের আলোকে অর্থনীতি কোন বিজ্ঞান নয়, বরং তা ধর্মের মত, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর”।
গুন বিচারে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর এবং জঘন্যতম ধর্মীয় মতবাদ হল পূঁজীবাদী অর্থনৈতিক মতবাদ যা বৈজ্ঞানিক যুক্তি, উপযোগীতা ও নৈর্ব্যক্তিক কার্যাকরীতা বিবেচনা না করে 'বাজার', 'চাহিদা' ইত্যাদি ভূতুরে ধারণাকে সুকৌশলে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে বিশ্বাস করানো হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিবিদগন জগতের সবচেয়ে কার্যকর ও সফল ধর্ম যাজক হতে পারেন কিন্তু কোন ক্রমেই বিজ্ঞানী নয়। সত্যিকার অর্থে আমাদের বর্তমান অর্থনীতি মানব কল্যাণে নয় বরং মানব শোষনেই বেশী কার্যকরী আর সেটাই তার লক্ষ্য। চোখে মনিবের ঠুলি পরানো জ্ঞান পাপীরা অর্থনীতির গতি প্রকৃতির সঠিক ব্যাখ্যা নয় বরং কি ভাবে অর্থনৈতিক নীতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হবে সেই ছবক দেন গোঁজামিল আর বায়বীয় শব্দের সাহায্যে, হয়ত এ কারণেই যেখানে দুইজন অর্থনীতিবিদ থাকে সেখানে কম পক্ষে তিনটি মতামত থাকে।
তবে সবচেয়ে বড় দু:খের কথা দু:খ করে কোন লাভ নাই নিজের সহ্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়া কারণ ধর্ম নিয়ে আমরা দুই একটা প্রশ্ন করা শিখলেও অর্থনীতি নিয়ে আমরা এখনো কথা বলাই শিখিনি! বিনা প্রশ্নে কোন কিছু বিশুদ্ধ হয় না, ধর্ম নিয়ে মানুষ যখন প্রশ্ন করতে শিখেছে তখন কোন এক দিন এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবে কিন্তু ঈশবর সয়ং প্রশ্নের সম্মূখীন হলেও ঈশ্বরের ভূমিকা ছিনতাইকারী অর্থনীতি এখনো প্রশ্নাতীত বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত।

ঈশ্বরেরও পূঁজি লাগে, কৃষকের লাগে না!

বৃহৎ পুঁজির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বৃহত্তর পুঁজি দরকার আর সেটা আমাদের প্রান্তিক জনগণেরই আছে যার লোভে আর লাভে টিকে আছে বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা! কৃত্রিম 'অভাব' আর সাময়িক লাভের লোভই পুঁজিবাদের টিকে থাকার শক্তি দেয়। আমরা যতটা না বাস্তবে অভাবী তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক ভাবে অভাবী আর এটা পুঁজিবাদের সচেতন কন্ডিশনিং। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ঐ দাতাদের ভাতা যোগাতে গিয়েই কৃষক আজ অভাবী। ঐ ত্রাতাদের চাপা থেকে বেরুতে পারলেই কৃষক হবে ঈশ্বরের মত স্বাধীন ও সূখী। অথচ কেবলমাত্র হিসাবে গোঁজামিল দিয়ে ধোঁকা দিয়ে কৃষকের সম্পদ চুষে নেয় পুঁজি। 
বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে প্রত্যেক বছর সরকার ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বিশাল পুঁজি সরবরাহ করে, যে সুবাদে মাঝে মাঝেই গভর্নর মশাই এর স্মীত হাস্য দর্শনের সুযোগ হয় আর আমারা কৃষক ও কৃষকের সন্তানেরা তাদের অবতার ভেবে নিশিদিন পূজা আর ভোগ দেই। তাদের এই দয়া না থাকলে কৃষক যে এতদিনে মরে ভূত হয়ে যেত সেটা ইনিয়ে বিনিয়ে ধমকিয়ে চারবেলা মনে করিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি।
এবার আসুন একটা উল্টো হিসাব করি! 
প্রত্যেক বছর সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় দেশে আবাদযোগ্গ ও আবাদকৃত সকল ফসলের একর প্রতি উৎপাদন ব্যায় নির্ধারন করে যা মোটামুটি বাস্তবসম্মত আর বিভিন্ন উৎস থেকে হিসেবে করা হয় প্রত্যেক বছর দেশে কি পরিমান জমিতে কি ফসল চাষ করা হয়। এই তথ্যগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক সহ অনেক যায়গাতে পাওয়া যাবে। এবার ঐকিক নিয়মে বের করুন দেশে শস্য উৎপাদনে মোট কত পুঁজি জড়িত আর কত অংশ কে সরবরাহ করে। কৃষক নিজ দায়িত্বে কৃষি উৎপাদনে পূঁজি বিনিয়োগ না করলে এতে যে মহাবিশাল পুঁজি লাগে তা আমাদের রার্ষ্ট্র ব্যবস্থার সরবরাহের সক্ষমতাই নাই!  সরকার, দাতা, ত্রাতা সবাই মিলেও পাঁচ দশ ভাগের বেশী পূঁজি সরবরাহ করে না কিন্তু এই উৎপাদনের উপর ভর করে টিকে আছে আমাদের সমগ্র অর্থনীতি।
পুঁজির মোকাবেলা পুঁজি দিয়েই করতে হবে এবং তা অবশ্যই সম্ভব।আপনি হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না তাই হিসাবটা নিজেই করে দেখুন বাংলাদেশে যে কোন বছরে শস্য উৎপাদনে জড়িত পুঁজি ঐ বছরের জাতীয় বাজেটে জড়িত মোট পুঁজির চেয়েও বেশী !!! কৃষকের ব্যালান্স সীট স্বয়ং রাষ্ট্রের চেয়ে বড় আর বাংলা মায়ের আছে বিশ্বের উর্বরতম জরায়ু, বাংলার কৃষক গরীব হবে কেন !? বাংলার কৃষকের অবস্থান হওয়া উচিত ঈশ্বর ও মানুষের মাঝামাঝি কারণ তারা ধরনীর ঈশ্বর!

লাখপতি ছাত্র!

বর্তমান ব্যাংক ঋণ-নির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোন ভাবেই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়, কারণ এই দারিদ্র্যই বর্তমান ব্যবস্থার মূল জ্বালানী, কোন অবস্থাতে সবাই ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে না. অতি অবশ্যই একটা অংশকে ডিফল্টার হতে হবে অপর অংশকে নিয়মিত রাখতে। এর কারণ ঋণ বাজারে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি করে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হলেও আদতে ঋণ সূদের মাধ্যমে বাজারের অর্থ চুষে নেয় বলে সব ঋণ পরিশোধের মত অর্থই বাজারে থাকে না। । বর্তমান পৃথিবীর উৎপাদন ন্যায্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বন্টিত হলে পৃথিবীতে দারিদ্র্য শব্দের জন্মই হত না! পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানী তথা ‘দরিদ্রের’ পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা, সে জন্য ঋণ গন্দমের ন্যায় কার্যকরী. একবার খেলে আর রটার্নের সূযোগ নাই। উন্নয়নের ডামাডোলে মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী ও প্রত্যক্ষ শোষণের সবচেয়ে কার্যকরী, উপরন্তু ভীষণ লাভ জনক ও সস্তা উপায় ঋণ নামক গন্দমে বাজার সয়লাভ হয়ে যায়! অর্থনীতিবিদ নামক ভাড়াটে পীর আউলিয়াদের প্রলোভনে পা দিয়ে মানুষ গোগ্রাসে গিলছে এই গন্দম, তবে এ বিষয়ে ইভের কোন প্ররোচনা তো ছিলই না বরং অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বারণ উপেক্ষা করেই আদম ভোগের আশায় সুখ বিসর্জন দিয়েছে।
দীর্ঘকাল ইভেরা নিজে এই গন্দম খায়নি কিন্তু হঠাৎই এক হ্যামিলনের বাঁশি ওয়ালার ‘গন্দম খাওয়া আমার অধিকারআমার মানবাধিকার’ নামক রাপ সং এর ইলিউশানে ইভদেরও ডিলিউসন শুরু হয়, আর উইপোকার মত দলে দলে তারাও গন্দম খায়। এই বাঁশিওয়ালাার অপূর্ব বাজন ভঙ্গির কারণে প্লেগের চেয়ে দ্রুত একটা গন্দম খোর সভ্যতা গড়ে উঠেছে আর পূঁজি পেয়েছে অফুরান ‘দরিদ্রের’ ভাণ্ডার। আমার ধারণা এই বাঁশি ওয়ালার মগজ পুঁজি রসে চুবানোর ফলে বাস্তবে ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য সৃষ্টির পথ সহজ ও তরান্বিত করেও আবার দারিদ্র্যকেই যাদুঘরে পাঠানোর হ্যালুসিনেশনে ভুগেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই বাঁশি ওয়ালা ক্ষতিকর ভাইরাস পণ্যের মিথ্যা গুন গান করে বেচার জন্য এক সময় আত্মগ্লানিতে অনুতপ্ত হবেন, প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও। কোটি কোট মানুষকে ঋণ পরিশোধের কোন উপায় ছাড়াই ঋণের জালে আটকে ফেলার জন্য এই বাঁশি ওয়ালার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নৈতিক দাবি আমি কোন দিনও পরিত্যাগ করব না। যদিও এই বাঁশি ওয়ালার এখন আর গন্দম ফেরী করে বেড়ানোর দরকার পরে না তাই তিনি এখন তার নিজস্ব বহুতল বিপনীতে সেবা ব্যবসার দোকান দিয়েছেন, বেচা বিক্রি এখনও ততটা এখনও জমেনি, তবে আগেরটির মত বাঁশি ওয়ালার নতুন গান, চাকরী করি নাচাকরী বেচি” তত দ্রুত জনপ্রিয়তা না পেলেও সম্ভাবনা বেশ ভাল, তাছাড়া অত্যন্ত শক্তিশালী মার্কেটিং নেটওয়ার্ক থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারেও এর বেশ সম্ভাবনা আছে. ইতোমধ্যে অনেক দেশেই ফ্রানসাইজি খোলা হয়েছে এবং হচ্ছে।
পূর্ব পাপের অনুতাপেই সজ্ঞানেই হোক বা নয়া ইনোভেশনের অন্তর্নিহীত গুনের কারণেই হোক তার বর্তমান পণ্য এই মুহূর্তে এই শ্রেণীতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভাল পণ্য। সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হলে তিনি যে মহাপাপ করেছেন তার অনেক খানি মোচন হতে পারে। অন্তত তাত্ত্বিক ভাবে বাজারে ঋণ বিহিন পূঁজি সরবরাহের কারণে তার নতুন পণ্যটিকে আমি নৈতিক ও আদর্শিক ভাবে শত ভাগ সমর্থন করি তবে পণ্যের গুনগত মান এখনও সন্তোষ জনক নয়, আরও মানোন্নয়ন দরকার অবশ্য একটু বিলম্বে হলেও বাজারই এক সময় তা মন্থর গতিতে হলেও করবে। মাইক্রোক্রডিট আমাদের জীবনে যে গভীর ক্ষত হয়ে বসে আছে এই ক্ষত সারাতে প্রকৃত পক্ষে দরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল যার পদাংক অনুসরন করে গড়ে উঠবে একটা তরুন উদ্যোক্তা প্রজন্ম যা আমাদের আসল প্রয়োজন। আর এ জন্য আগে দরকার একটা উদ্যোক্তা ছাত্র প্রজন্ম যারা কেবল শিক্ষার দাস না হয়ে শিক্ষার শ্রষ্টা হবে, মান্ধাতা আমলের বস্তাপচা অচল শিক্ষার বদলে নতুন প্রজন্ম পাবে নিত্য নতুন শিক্ষা। শিক্ষার নূন্যতম যোগ্যতা হল তা মানুষকে বেঁচে থাকতে সক্ষম করবে আর তা কেবল তাদের সনদেই লেখা থাকবে না, প্রমাণ হিসাবে ছাত্র জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসাবে বাস্তবে তাদের পূঁজী সৃষ্টি হবে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শেষে নিজে কিছু করার জন্য নিজেদেরই 'সীড মানি' থাকবে, এদের মধ্যে কেউ কেউ হবে লাখপতি ছাত্র!

পরিবেশ নয় পরিবার বান্ধব ধরনী চাই!

"দেশের লোককে শিশুকাল হইতে মানুষ করিবার সদুপায় যদি নিজে উদ্ভাবন এবং তাহার উদ্যোগ যদি নিজে না করি তবে আমরা সর্ব-প্রকারে বিনাশপ্রাপ্ত হইব, অন্নে মরিব, স্বাস্থ্যে মরিব, বুদ্ধিতে মরিব, চরিত্রে মরিব-ইহা নিশ্চয়। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / শিক্ষাসংস্কার
কমপক্ষে দুই লাখ বছর আগে আমাদের আদি পুরুষের সোজা হয়ে দুই পায়ে হাঁটার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল মানব জাতির সভ্যতার পথে নিরন্তর এ যাত্রা। মহাকালের পরিক্রমায় মানুষের অভীজ্ঞতায় অর্জিত বুদ্ধি বৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়ে তা বর্তমান কালে ও বর্তমান রূপে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে আগামী প্রজন্মের নিকট সঞ্চালনের জন্য। প্রকৃত পক্ষে কোন মানুষই বিচ্ছিন্ন কোন মানুষ নয়। জেনেটিক্যালি মানুষের পূর্ব পুরুষের মানসিক উৎকর্ষতা উত্তর পুরুষে স্থানান্তরিত/সঞ্চালিত হয়। সভ্যতার ক্রমবিকাশের অবিরাম এই যাত্রায় রিলে দৌড়ের মত এক প্রজন্ম যেখানে শেষ করে পরের প্রজন্ম সেখান থেকে শুরু করে, আর এভাবে আমাদের বর্তমান অতীতের সকলের অবদানে সৃষ্ট ও পুষ্ট। ঈশ্বরের হাতে সৃষ্ট হোক আর বিবর্তনের ধারায় বানর বা অন্য যে কোন প্রাণী থেকেই হোক, দুই বা খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ থেকে কালে কালে বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে এই প্রজাতির জীবিত বংশধরের সংখ্যা সাতশ’ কোটি ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। মানব জাতী জন্ম সূত্রে পরিবার আর পরিবার সূত্রে পায় জীবিকা, ফলে তাদের জীবন মূলত তাদের জীবিকাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকে। প্রাথমিক ভাবে মানব জাতী একত্রে বসবাস করলেও সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দলে দলে বিভক্ত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকে মূলত জীবিকার কারণে। কোন এলাকায় প্রয়োজনীয় সম্পদের ঘাটতি দেখা দিলে দলে বলে সবাই মিলে অন্য এলাকায় চলে গেছে কিম্বা বিভক্ত হয়ে দলের সদস্য সংখ্যা সীমিত করেছে, ফলে সব সময়ই তাদের পরিবার ও জীবিকা এক সাথেই বা পাশাপাশি ছিল। বেশিরভাগ মানুষই পরিবারের সাথে একত্রে বাস ও কর্ম করত যৌথ জীবনের দায়-সম্পদের অংশীদার হয়ে। মোটা দাগে এই ধারাই বহমান ছিল আমাদের আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার আগ পর্যন্ত।
শিল্প বিপ্লবের পর এই ধারা দ্রুত পাল্টাতে থাকে, শহর কেন্দ্রিক কর্ম বিকাশের সাথে সাথেই শুরু হয় মানুষের শহরমুখী জীবন দৌড়ের। প্রথমে কেবল কর্মরতরাই অস্থায়ী ভাবে শহরবাসী হলেও সময়ের সাথে সাথে সময়ের প্রয়োজনেই সপরিবারে শহরবাসী হবার প্রবণতা বাড়তে থাকে। শিল্প বিপ্লবের বিস্ফোরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় অগ্রসর সমাজপতিদের একটা অংশের ডিএনএ বদল হয়ে পুঁজিপতি নামক অস্বাভাবিক ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার গডজিলার জন্ম হয় যারা পুঁজি নামক জিহ্বা দ্বারা জগতের সবকিছু চেটে খেতে থাকে। এই গডজিলাদের বাড়ন্ত ক্ষমতা আমাদের প্রথাগত সমাজের ডিএনএ পর্যন্ত বদলে দিয়ে সবকিছু নিজের সুবিধা মত বদলে নিতে থাকে, আস্তে আস্তে শুরু হয় পুঁজির দখলদারিত্বে অন্যায্য বণ্টনের কারণে উৎপাদন নিরপেক্ষ ও সুপরিকল্পিত কৃত্রিম অভাব। এর মধ্যে জন্ম নিতে থাকে পুঁজির নিত্য নতুন জারজ সন্তান ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র, সাথে যোগ হয় বিকৃত ভোগ-বিলাসী আফিম। মারণাস্ত্রের জোরে আর ভোগ আফিমের যাদুতে পুঁজির দাপটে ঈশ্বর এখন গদি ছাড়াএখন গোপনে খুচরায় স্বর্গ বেচলেও আহার বাসস্থানের সত্ত্ব একবারে পাইকারি বেচে দিয়েছেন পূঁজির কাছে তাই একমাত্র স্বর্গ ছাড়া সব কিছুর নিয়ন্ত্রক পূঁজি। অভাবের ভয়ে পূঁজির প্যাঁচে দিনে দিনে জীবিকা পরিণত হয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধে। এই জীবিকা যুদ্ধের ডামাডোলে জীবন হয়ে যায় ফেরারি, পরিবার দুরে সরতে থাকে, এখন জীবিকাই জীবনের একমাত্র উপজীব্য। প্রতি দিন সকাল হয় তবু সাত শ’ কোটির বেশী মানুষের জীবনে আসেনা কোন ভোর, আসে অসম ময়দানে জীবিকার তোরজোড়, প্রাচুর্য পূর্ণ ধরণীতে কৃত্রিম ও কাল্পনিক অভাব ভীতি আমাদের রূপান্তরিত করেছে সর্ব ভুক লোভাতুর তেলাপোকায়।
ক্রম বৃদ্ধমান যান্ত্রিক পশ্চিমা সমাজের সাম্প্রতিক মানবিক উপলব্ধি,”শিশু ও বৃদ্ধ" পালনে পরিবারের বিকল্প নাই। বিশেষ করে নিম্ন জন্মহার, সিঙ্গেল ও সিঙ্গেল প্যারেন্ট পরিবার তাদের প্রধান ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় এবং সুস্থ মানবিক বিকাশের জন্য সুস্থ পারিবারিক পরিবেশের অপরিহার্যতা নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা তাদের পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের হেলায় হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য তারা মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নিচ্ছে, বিশেষ করে ইউরোপের কিছু কিছু দেশ তাদের জিডিপির তিন থেকে সাত শতাংশ পর্যন্ত এই খাতে ব্যয় করছে। ব্রিটেন “নাথিং ম্যাটার মোর দ্যান ফ্যামিলি” নামে দীর্ঘ মেয়াদী ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশীর ভাগ দেশ গ্রিন পেপার কোন কোন দেশ দীর্ঘ মেয়াদী পলিসি পেপার তৈরি করেছে। জাতিসংঘ দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে গত ১৫ মে, ২০১৪ বিশতম বিশ্ব পরিবার দিবসে ঘোষণা করেছে,”ইন্টেগ্রেট ফ্যামিলি ইন পোষ্ট ফিফটিন ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা”। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বাংলাদেশসহ কিছু দেশ বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যেখানে পরিবার নামক মহামূল্যবান সামাজিক সম্পদ এখনও পোড়া বাড়ির মত টিকে আছে সেখানে এ বিষয়ে তেমন কোনই জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নাই, এমনকি মূল ধারার উন্নয়ন আলোচনাতেও পরিবার নাই! আমাদের অস্তিত্ব ও সুন্দর আগামীর জন্য দরকার একটা পরিবার বান্ধব পৃথিবী আর পরিবার বান্ধব পৃথিবী আবশ্যিক ভাবেই পরিবেশ বান্ধবও বটে কিন্তু পরিবেশ বান্ধব হলেই তা পরিবার বান্ধব নয়

বিষাক্ত জ্ঞান আর দাসত্বের শিক্ষা!

বিষাক্ত জ্ঞান আর দাসত্বের শিক্ষা! জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই আলো কিন্তু সব জ্ঞান নয় আবার অর্জিত জ্ঞান কার্যকরের জন্য দরকার আগে বিষাক্ত জ্ঞান বর্জন। হোমোসেপিয়ানদের সব সদস্যই কম বেশী বিষাক্ত জ্ঞানের ভাইরাসে আক্রান্ত অযৌক্তিক প্রাণী আর এজন্যই সুবুদ্ধির চেয়ে কুবুদ্ধি বেশী, আত্মবিকাশের চেয়ে আত্মবিনাশের ক্ষমতা চর্চা বেশী। ভিন গ্রহে মানুষ আছে কি না তা জানতে ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলেও কেবল খাবার আর মাথা গোঁজার জায়গার অভাবে হাজার মানুষ জীবন হাতে নিয়ে অজানা সাগর কিম্বা জানা বিপদের পথে নিরন্তর ছুটতে বাধ্য হচ্ছে মানুষেরই লোভের বলি হয়ে, মানুষ এখানে কেবল জীবিত বা মৃতের সংখ্যা মাত্র! খাবার থাকতে খাবারের অভাবে মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী মরে না বা আক্রান্ত না হলে স্বজাতির অপর সদস্যদের মারে না। মানুষ তাদের প্রায় সকল প্রতিপক্ষকে বস করেছে কিন্তু স্বজাতীর কাছে থেকে আত্মরক্ষার কোন নিশ্চিত ব্যবস্থা মানুষ এখনও করতে পারেনি যদিও এখাতেই মানুষের একক বৃহত্তম বিনিয়োগ। মানুষ আসলে আত্মরক্ষার চেষ্টাই কখনও করেনি বরং যা করেছে এবং করছে তা হল আক্রমনের ক্ষমতা বৃদ্ধি যা আত্মঘাতী হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রমানিত।
শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড হলেও বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুদণ্ড! জীবনের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করে অর্জিত জ্ঞানের প্রমাণ সরূপ সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছু থাকে না, কেবল কিছু শিক্ষা বেপারীর গতরে মেদ বাড়ে! পক্ষান্তরে শিক্ষার পরিকল্পিত দাসত্বে শৃঙ্খলিত মানবিক সৃষ্টিশীলতা ও সম্ভাবনা! শিক্ষা এখন প্রয়োজন নয় অবশ্য কর্তব্য উপাসনা মানুষ নামক অলীক প্রাণীতে পরিণত হবার আশায়, যদিও মানুষ হবার জন্য কার্যকরী শিক্ষা বা বর্তমান শিক্ষার কার্যকরতা কোনটাই প্রমাণিত সত্য নয় বরং কিছু জ্ঞান বেপারী পীর আউলিয়াদের তাবিজের জোরে প্রতিষ্ঠিত অনুগত ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার দাস তৈরির জন্য।

সাহিত্যের রাজনীতি ও রাজনীতির সাহিত্য!

সাহিত্য হল স্ব-পরিচালিত আলোকিত মানুষ তৈরির বিজ্ঞান আর রাজনীতি সব মানুষের আলোকিত মানুষ হবার সুযোগ নিশ্চিত করার বিজ্ঞান। সাহিত্যের লক্ষ্য মানুষকে ভবিষ্যতের আলোকিত পৃথিবীর উপযোগী করে গড়ে তোলা আর রাজনীতির কাজ বর্তমানকে সবার উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমাদের বর্তমান সভ্যতা ঊষা লগ্ন থেকেই সাহিত্য আর রাজনীতির যৌথ অবদানে বিকশিত।  তবে কুলীন সাহিত্যিক আর সাহিত্যের কুলীনেরা এক নয়, যেমন এক নয় নীতিরাজআর রাজনীতি! কুলীন সাহিত্যিকরা জীবদ্দশাতেই খ্যাতি পায় যার স্থায়িত্বকাল ঐ জীবনকাল পর্যন্তই কিম্বা তারও কম বা কেবল এক ঝলক কিন্তু সাহিত্যের কুলীনদের খ্যাতি আসে সাধারণত মরণোত্তর তবে এর স্থায়িত্বকাল সুদীর্ঘ বা ক্ষেত্র বিশেষে অনন্ত। কর্পোরেট বদান্যতায় কুলীন সাহিত্যিকদের দৌরাত্ম্যে সাহিত্যের কুলীনেরা বহু আগেই লাইব্রেরীতে আশ্রয় নিয়ে কোন মতে নিজেদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির হাত থেকে টিকিয়ে রেখেছেন অসহায় ছাত্রদের সহায়তায়। নীতিরাজের বাস কেবল কেতাব আর তত্ত্বে কিন্তু রাজনীতি কোন স্বতন্ত্র স্বাধীন নীতি নয় বরং বিজয়ীর নীতিই রাজনীতি, সবলের নীতি বা সরল হওয়ার জন্য নীতিই রাজনীতি।  রাজনীতি  শয়তানের মতই বহুরূপী অসীম ক্ষমতাধর এবং সর্ব কালে সর্বগামী। সব রাজনৈতিক দলের নিজস্ব নীতি থাকলেও কোন নীতি ভিত্তিক দল নাই। রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ড দেখে কোন মতেই যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয় যে কে কোন দলের আবার তাদের দলীয় কর্মসূচী দেখে বোঝা অসম্ভব কোন দল কোন মতাদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত।
সাহিত্যিক আর রাজনীতিবিদরাই আমাদের পরিবর্তন ও জাতিগত মূল্যবোধ, নীতি-বোধ আর প্রগতির কাণ্ডারি, এদের ব্যর্থতায় প্রকৃতির নিয়মেই এই শূন্যস্থান পূরণ করে ধর্মের ভাণ্ডারী! ধর্ম কখনও ঐক্য আনে না আর সেটা ধর্মের ধর্মও নয়, ধর্মের লক্ষ্যই অন্যের চেয়ে নিজেকে স্বতন্ত্র ও শ্রেষ্ঠ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। এমনকি কোন দেশের প্রায় শতভাগ নাগরিক একই ধর্মের হলেও সেখানে ধর্মের অবদান ঐক্যের চেয়ে অনৈক্য সৃষ্টিতেই বেশী। ধর্ম আমাদের চরিত্র গঠনে কি ভূমিকা রেখেছে তা সুস্পষ্ট না হলেও আমাদের প্রগতির গতিতে এর নেতিবাচক প্রভাবের অসংখ্য নজির আছে, মাঝে মাঝে তো গতির চাকাই ভেঙ্গে গেছে ক্রুসেড আর জিহাদ গোলার আঘাতে। ঐতিহাসিক ভাবে আমাদের সকল গুনগত উন্নতির স্থপতি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিবিদরা হলেও এর রূপকার সাহিত্যিকরা। বিশ্ব ইতিহাসে বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ মানবিক ও আত্মিক উন্নয়ন হয়েছে যখন তাদের রাজনীতি ও সাহিত্যের গুনগত মান সর্বোচ্চ ছিল। মানসিক ও আত্মিক উন্নয়ন ছাড়া কেবল প্রযুক্তি জ্ঞান যে একটা পুরা জাতিকে আত্মঘাতী স্টুপিডের দলে পরিণত করতে পারে তার প্রমাণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব জার্মানি।
প্রয়োজন মাফিক সাহিত্যিক উৎপাদন করা না গেলেও প্রয়োজন মাফিক রাজনীতিবিদ উৎপাদন পদ্ধতি প্লেটো আমাদের বহু আগেই শিখিয়েছেন যদিও আমরা সে পথে কখনই হাঁটিনি। অবশ্য এখন প্লেটো মশাই বেঁচে থাকলে রাজনীতিবিদদের 'অতি উচ্চ নৈতিক গুন ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী' হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করার জন্য অনুতপ্ত হতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে কোন গ্রহণ যোগ্য জাতীয় রাজনৈতিক দর্শন গড়ে ওঠেনি, আর নিজস্ব সাহিত্যিক ধারা বিকশিত না হওয়ায় সে অভাবও অনুভূত হয়নি।  এর অবধারিত ফল হিসেবে আমাদের সমগ্র ব্যবস্থাই কোন না কোন স্বার্থান্বেষী মহলের মদদে ও সুবিধায় প্রতিষ্ঠিত। আত্ম বিকাশ ও আত্মোন্নয়নের জন্য রাজনীতির সাহিত্যে কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেওসাহিত্যের রাজনীতি সর্বদাই ক্ষতিকর ও পরিত্যাজ্য, আর সে কারণেই রাজনীতিবিদের জন্য সাহিত্য চর্চা সমাদৃত গুন হলেও সাহিত্যিকের জন্য রাজনীতি চর্চা বর্জনীয় ত্রুটি। আমাদের বর্তমান সাহিত্য রাজনীতির ভারে ভারাক্রান্ত হলেও রাজনীতি প্রায় সাহিত্য মুক্ত কিন্তু অর্থনীতি আসক্ত।

অরণ্যে একাকী সরস্বতী!!!

সরস্বতীর সাথে আমার সম্পর্ক কোন দিনও ভাল ছিল না, অবশ্য সম্পর্ক যে আমি ভাল রাখতে চেয়েছি বা চেষ্টা করেছি তাও না, তবে লক্ষ্মীর প্রতি অক্ষি আমার সর্বদা স্থির থাকলেও সে আমারে কখনই পাত্তা দেয়নি, আর তার চরিত্র নিয়ে বাজারে নানা গসিপ চালু থাকলেও সেটা আমার জন্য কোন সমস্যা নয়। তদুপরি একমাত্র লক্ষ্মীর প্রতিই আমার শর্তহীন ভক্তি ছিল এবং আছে। যদিও কপালে সরস্বতী বা লক্ষ্মী কেউ জোটেনি জুটেছে অরণ্য বাস!
সেদিন অরণ্যের বাইরে থেকে প্রাতঃক্রিয়া সেরে ডেরায় ফিরছিলাম, হঠাৎ দেখি অদূরেই সরস্বতী কি এক গুল্ম লতার শিকড় তুলছে, চোখে চোখ পরতেই উঠে দাঁড়ায়, আমারও মনে পুড়ান ব্যথার কারণে জীবনের প্রথম বারের মত টিজ করি, ইতোপূর্বে যে কখনও কাউকে টিজ করতে ইচ্ছা করেনি তা নয়, আসলে উপযুক্ত সঙ্গ ও প্রয়োজনীয় সাহসের অভাবে পারিনি, অরণ্যে সরস্বতীকে একা পেয়ে চিৎকার করে বলি, ‘একা নাকি! হবে নাকি!?” সরস্বতী শান্ত গলায় উত্তর দেয়, “তোমার আপত্তি না থাকলে আমার তরফে কোন সমস্যা নাই, আমি এখন ট্রান্স-জেন্ডার তাছাড়া শক্তি বর্ধক শিকড় খেতেই এসেছি অরণ্যে”

সবকিছু নরমাল!!!

জগতের সবচেয়ে বড় গোলক ধাঁধা Normalcy বা স্বাভাবিকত্বের ধারনা, বাস্তবে নরমাল বা স্বাভাবিকই বলে কোন কিছু নেই এবং তা থাকা সম্ভবও নয়, এটা রাজনৈতিক মানুষের সবলের দুর্বল দমন কৌশলের অংশ যার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই এমনকি এর কোন প্রমিত সংজ্ঞাও নেই। নরমাল শব্দটি নরমালকে বোঝাতে সৃষ্টি হয়নি, এটা ব্যবহৃত হয়  রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কে নরমাল নয় সেটা বোঝাতে, আসলে এমন কিছু  নেই যা নরমাল নয়!জগতের সকল কিছুই একটা মহা সিস্টেমের অংশ যেখানে প্রত্যেকেই একক ভাবে ও যৌথ ভাবে ক্রিয়াশীল সিস্টেম ও সাব সিস্টেমের অংশ হিসেবে। নরমাল না হলে কোন কিছু অস্তিত্ব শীলই হত না অথচ আমাদের জাগতিক পরি-কাঠামো অদৃশ্য নরমালদের জন্য যেখানে প্রত্যেকেই কোন না কেন মাত্রায় ত্যাগ বা গ্রহণ করে অবাস্তব নরমাল সিস্টেমের এর সাথে একাত্ম হয় যে নরমালদের জন্য জগতকে সাজানো হয়েছে  সেই কথিত নরমালদের চেনা বা জানার কোন উপায় না থাকলেও কে নরমাল নয় সেটা জানা বেশ সহজ। মোটা দাগে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী নরমাল নয়, সে জন্য নরমাল সিস্টেমের কোন পরিকল্পনাতেই তাদের বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয় না !
শব্দ গত বা বাস্তবে অস্তিত্ব শীল কোন নরমাল না থাকলেও এই গোলক ধাঁধা আসলে সচেতন কৌশলে সৃষ্টি যারা নরমাল নয় তাদেরকে বোঝানোর জন্য, এজন্যই নরমাল চোখে না দেখলেও সবাই জানে কারা নরমাল নয়৷ নরমাল বা ‘অ-নরমাল’ তাদের বস্তু গুন বা অর্থ কোনটাই প্রকাশ করে না, স্থান কাল পাত্রে এদের ধর্ম বা অর্থ আরোপ করা হয় সবলের অনুকূলে তাই নরমালচি আসলে একটা কৌশলী রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা!
যে নরমালদের জন্য এই সিস্টেম তারা মোট জন সংখ্যার কত অংশ তা জানতে আসুন কত অংশ নরমাল নয় তা বের করি। গড় পড়তা পৃথিবীতে প্রতিবন্ধী 10%, শিশু (Bellow 15) 25.64%, বৃদ্ধ (65+) 8.49% মোট 44.13, অবশিষ্ট 55.87% এর অর্ধেক নারী হলে মাত্র 27.94% নরমাল পুরুষ আর এই  পুরুষদের জন্যই আমাদের বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা, এই নরমালরাই মালিক আর অন্য সবাই ভাড়াটিয়া।

প্রতারণার নতুন নাম ‘স্পুফিং-Spoofing’!

প্রতারণার নতুন নাম ‘স্পুফিং-Spoofing’!বাঁচতে হলে জানতে হবে।। 
>>“হ্যালো আমি xxxx ফোন কোম্পানী থেকে বলছি, আপনি আমাদের বিশেষ ক্যাম্পেইনে পাঁচ হাজার টাকার টক টাইম জিতেছেন সেটা একটিভেট করার জন্য এখুনি তিনশ’ টাকার একটি কার্ড নিয়ে এসে তার নাম্বার জানান।“
>>”হ্যালো আমি xxxx কোম্পানি থেকে বলছি, আমাদের নতুন প্রোডাক্ট লন্সিং উপলক্ষে লটারিতে র্যান্ডমলি বাছাইকৃত মোবাইল নাম্বার হতে আপনার এই নম্বরে একটা ব্র্যান্ড নিউ গাড়ী পেয়েছেন, গাড়ীর বদলে নগদ বিশ লাখ টাকা নিতে পারবেন তবে তার আগে কাগজ পত্র ঠিক করতে আজকের মধ্যে এই নম্বরে xxটাকা বিকাশ করে পাঠান।“
>>”হ্যালো আমি আপনার স্বামী/স্ত্রীর সহকর্মী বলছি, আপনার উনি এক্সিডেন্ট করে এখন হাসপাতালে, জরুরী অপারেশনের জন্য xxটাকা লাগবে, এখুনি xxxxনম্বরে বিকাশ না করলে ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করবে না, রুগীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন।“
>>”হ্যালো, বল আলহামদুলিল্লাহ! তোর উপর খোদার রহমত নাজেল হয়েছে, তুই অগাধ টাকা পয়সা ও সোনা দানা পাবি তবে সে জন্য xxxমাজারে সিন্নি দিতে হবে।“
 উপরের সংলাপ গুলি মোবাইল ফোনে প্রতারণার কৌশল হিসেব বহুল ব্যবহৃত যা ইতোমধ্যেই আমরা জেনে গেলেও প্রতারকরা নিত্য নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাদের সাফল্য অব্যাহত রেখেছে। উপরের কৌশলে প্রতারকরা কখনো মানুষের লোভ আবার কখনো নির্বুদ্ধিতাকে কাজে লাগিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতাই এ ধরনের প্রতারণা থেকে কার্যকর রক্ষাকবচ, কিন্তু ঘটনা যদি এমন হয় যে,
১। মনে করুন আপনি মাঠ পর্যায়ের চাকুরীজীবী, আপনাকে ফোনে বলল,”হ্যালো আমি এমডি/চেয়ারম্যান বলছি, দশ মিনিটের মধ্যে তোমার কাছে লোক যাচ্ছে তাকে xx টাকা দিয়ে দাও (কিম্বা অন্য কোন ভাবে পাঠাতে)।“ এমডি’র সাথে নিয়মিত কথা না হলেও তাঁর নাম্বার আপনার মোবাইলে সেভ করা আছে এবং কলটি সেই নাম্বার থেকেই! আপনি বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই আদেশ পালন করলেন এবং পরে জানলেন এমডি আপনাকে ফোনই করেনি,  বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রতারণা!
২। আপনার স্বামী/স্ত্রীর মোবাইল থেকে আসা কলে অন্য কেউ বলল, “আপনার স্বামী/স্ত্রী মারাত্মক দুর্ঘটনায় অজ্ঞান, চিকিৎসার জন্য/হাসপাতালে নেয়ার জন্য xxx টাকা পাঠান।“ আপনি কাল বিলম্ব না করে টাকা পাঠানোর পর আপনার স্বামী/স্ত্রী সুস্থ ভাবে বাসায় আসলে জানতে পারেন এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি তবে ঐ একই সময়ে তাকে তার  মোবাইল কোম্পানি থেকে ফোন করে সিস্টেম আপগ্রেডের জন্য কিছুক্ষণ মোবাইল বন্ধ রাখতে বলেছিল যাতে ব্যালেন্স ডিলিট না হয়ে যায়।
 উপরোক্ত ঘটনা দুইটি আপাত দৃষ্টে অসম্ভব মনে হলেও এটাই এখন প্রতারণার নতুন কৌশল যার নাম    ‘স্পুফিং-Spoofing’! এই কৌশলে সফটওয়ারের মাধ্যমে কলার নিজের নাম্বার হাইড করে তার স্থলে কলারের ইচ্ছে মত নাম্বার প্রদর্শন করে রিসিভারের মোবাইলে। এরকমই একটি সফটওয়ারের নাম ‘Caller ID Spoofer’ যা ইন্সটল করতে হয় কলারের মোবাইলে, তারপর এর মাধ্যমে কল করার সময় কলার নাম্বার হিসাবে প্রদর্শনের অপশনে যে নাম্বার দেয়া হবে রিসিভারের মোবাইলে কলারের প্রকৃত নাম্বারের বদলে ঐ ফেক নাম্বার প্রদর্শিত হবে কলার হিসেবে।
এধরনের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে হলে অস্বাভাবিক যে কোন কলের ক্ষেত্রে ঐ নাম্বারে কল ব্যাক করাই নিশ্চিত হওয়ার সহজতম উপায় কারণ কল ব্যাক করলে তা প্রতারকের কাছে না গিয়ে প্রকৃত নাম্বারেই যাবে।

কমেই যখন বেশী লাভ!

৫+৫=১০ হলে, ২৫ থেকে ১০ বিয়োগ করলে বিয়োগফল ৫ এর কম!😀
অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান গুলির জন্য সবচেয়ে সস্তা এবং কষ্টকর তহবিলের উৎস কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারনত বাজার দরের অর্ধেক দামে তহবিল পাওয়া গেলেও খাজনার চেয়ে বাজনা বাজে বেশী শর্তের বেড়া জালে। তবুও স্বল্প ব্যয়ের কারনে সব ব্যাংকই চেষ্টা করে যত বেশী সম্ভব কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল সংগ্রহের, অগত্যা বাজার থেকে দ্বিগুন বা তারও বেশী দামে তহবিল সংগ্রহ করে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল সংগ্রহের একটা খোলা দরজা আছে! এসএমই খাতে বিতরন কৃত ঋণের শতভাগ তহবিল পাওয়া যায় তেমন কোন শর্ত ছাড়াই। যেহেতু ব্যাংক গুলির ঘোষিত স্প্রেড ৫% এর নীচে তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫% সূদে টাকা দেয় একটু বেশীই লাভে ১০% সূদে বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু বেশীর ভাগ ব্যাংক এই খাতে স্বল্প সূদে সহজ লভ্য তহবিল না নিয়ে বেশী সূদে বাজার থেকে আমানত সংগ্রহ করে এসএমই ঋণ বিতরন করে।
বাহ! ভাল তো!!
ভাল না!?
😁৫ টাকায় কিনলে ৫ টাকা স্প্রেডে ১০ টাকায় বেচতে হয় আর ১০ টাকায় কিনলে ৫ টাকার কম স্প্রেডে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেচা যায়!
২৫%-১০%<৫% প্রমানিত!

পূঁজি যখন কথা কয়, ঈশ্বর তখন ঠাসি খায়!

বিশ্বব্যাংকের সূত্রে এডিবি’র হিসাব মতে ২০০৬ সালে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারী এন্টার প্রাইজ এর সংখ্যা ছিল মোট ৬.৮ মিলিয়ন (সে হিসাবে ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০মিলিয়নের উপরে এবং লাভজনক ও নিশ্চিত বিনিয়োগের সুযোগও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে), তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন সফল উদ্যোক্তা আছে যাদের কাছে নিশ্চিন্তে ৩৯৫.৯৭ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করা যায়! নতুন এসএমই প্রতিষ্ঠা বা কোন রকমে টিকে থাকাদের উন্নয়ন কোন প্রকল্পে নেই। কারণ সব প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ঋণের এই বিস্তৃত নতুন বাজারে পুঁজি’র মুনাফা নিশ্চিত করা, এসএমই খাতের উন্নয়ন নয়। সব ধরণের পুঁজি যাতে নিরাপদে স্ব স্ব কারবার করতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করাই দাতাগোষ্ঠীর কাজ। সেই পুঁজির বিকাশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার প্রচ্ছন্নভাবে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী যেসব উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও সামর্থ্য আছে কেবল তারাই এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। তেলীর মাথায় তেল নয়, এ যেন পুঁটিমাছ দিয়ে বোয়াল ধরা আর কি! প্রকৃত পক্ষে এসএমই খাতে ব্যাংক গুলির ঋণ দেবার কারণ কম ঝুঁকিতে উচ্চ সূদ আয়ের লোভ, এখানে নীতি বা মূল্যবোধের বালাই নাই।
দাতাগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজার ব্যাংক, মহাজন ব্যাংক, ঈমানদার ব্যাংক সহ নানা নামের নানা ঢং এর আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবারই নজর এখন এসএমই এর দিকে। কিন্তু সব এসএমই এর দিকে নয়, শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত ও লাভজনকভাবে পরিচালিত এসএমই এর দিকে। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য দাতা ও বন্ধুরা মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেমন, এডিবি ১২৬.৬৭ মিলিয়ন ডলার এর মূল প্রকল্প নং-৩৬২০০, আগস্ট ২০০৯ পর্যন্ত, পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ অক্টোবর ২০০৯ হতে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত । এই প্রকল্পে এডিবি ৭৬ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে ৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য ঋণ হিসাবে। যার সূদের হার গ্রেস পিরিয়ডে ১% এবং অবশিষ্ট সময়ের জন্য ১.৫% । স্বল্প সুদের কারণে দৃশ্যত এটি একটি মহৎ উদ্যোগ মনে হলেও এর আসল মোজেজা অন্য জায়গায়। কারণ এই ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হবে। আর অতীত অভীজ্ঞতানুযায়ী টাকার অবমূল্যায়নের ধারাবাহিকতায় আগামী ৪০ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বর্তমানের অর্ধেকেরও নীচে নেমে আসবে। বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার কারণেই তা অনিবার্য। ফলে গৃহীত অর্থের বহুগুণ বেশী পরিশোধ করতে হবে ভবিষ্যতে। শুধু কি তাই! এই ঋণের সাথে বিনামূল্যে আরও আছে হাজারো শর্তের বেড়াজাল। এই ঋণ বা বিনিয়োগের আসল লক্ষ্য মুনাফা কামানো নয়, শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন। পুঁজি’র সুবিধা মত সবকিছু সংস্কার, বদল করার শর্ত। সবধরনের পুঁজি যাতে নির্বিঘ্নে কারবার করতে পারে তার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা অর্জন।
<<১% সূদে ডলারের ঋণ টাকায় কত পার্সেন্ট দাঁড়ায় তার একটা নমুনা>> 
সাধারনত এই ঋণ গুলি ৪০/৫০ মেয়াদি হয়, মনে করুন ১৯৭১ সালে ১% হারে ১০০০ ডলার নিয়েছিলাম যা চলতি বছর পরিশোধ্য। তাহলে ডলারের হিসেবে ৪৩ বছরে সরল সূদে ও আসলে পরিশোধ করতে হবে ৪৩০ ডলার সূদ সহ পরিশোধ্য ঋণের পরিমান (১৪৩০ ডলার @৭৮ টাকা) সর্বমোট ১,১১,৫৪০/- টাকা যদিও টাকার হিসাবে ১৯৭১ সালে ঋণ নিয়েছিলাম মাত্র (১০০০ ডলার @৭ টাকা ৮৬ পয়সা) ৭,৮৬০/- টাকা, অতএব ৪৩ বছরের ৩৩৮০ টাকা সূদ ও আসল মিলে পরিশোধযোগ্য মাত্র ১১,২৯৩/-টাকা!
কেবল মাত্র ডলারে পরিশোধ্য হওয়ায় মাত্র (১০০০ ডলার) ৭৮৬০ টাকা ঋণের বিপরীতে পরিশোধ করতে হচ্ছে ১০৩৬৮০/- টাকা সূদসহ মোট ১,১১,৫৪০/- টাকা! 
এখন আপনি হিসাব করে দেখুন ডলারের ১% টাকায় বার্ষিক ২৪১% এরও বেশী,
শুভংকরের ফাঁকিটা এখানেই।

দাস কাব্য!

মানুষ অভ্যাসের দাস নাকি অভ্যাস মানুষের দাস তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দাস মানুষই যে আমাদের এই প্রগতির গতি দাতা ও ভিত্তি নির্মাতা তা সর্বকালের প্রমাণিত সত্যি। সভ্যতার ঊষা লগ্ন থেকেই আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা মূলত দাস নির্ভর ছিল, সামন্ত প্রভুদের প্রয়োজনে ভূমি দাসদের উন্মেষ ঘটলেও শিল্প বিপ্লব পরবর্তীতে এই প্রথায় কিছু পরিবর্তন আসে, আস্তে আস্তে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষিতে নগর কেন্দ্রিক শ্রম বাজার বিকশিত হয়৷ সামন্ত প্রভুদের জায়গায় শিল্পপতি নামে নতুন প্রভুর সৃষ্টি হয়। এই প্রভুদের প্রয়োজন থেকেই শ্রমিক নামক শিল্প দাসদের জন্ম।

পূর্বতন দাস প্রথা সামন্ত যুগের কৃষি উৎপাদনের চাহিদা মেটালেও এই নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন দাসের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ সামন্ত দাসদের চেয়ে শিল্প দাসদের ভাগ্য কিছুটা ভাল ছিল, অন্তত তাদের স্বীকৃত কিছু নির্দিষ্ট অধিকার ছিল নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তবে এক্ষেত্রে অধিকার বা দায়িত্বের বিষয়ে তাদের নিজেদের পছন্দের তেমন কোন সুযোগ ছিল না, এমন কি চুক্তির চেয়ে বেশী দায়িত্ব পালনে বাধ্য হলেও প্রাপ্য অধিকার তো দূরে থাক প্রভুদের স্বেচ্ছা ঘোষিত সুযোগও কখনও পায়নি৷ তুলনা মূলক সরল কিন্তু বড় বড় যন্ত্র নির্ভর কারখানাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীভূত শ্রমিক কলোনির বিকাশ ঘটে।

উনবিংশ শতাব্দীর গোরা থেকেই আমাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে আর তার ফলে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন জটিল যন্ত্রের বিকাশ সামগ্রিক উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। জটিল যন্ত্র পরিচালনা আর বিশাল উৎপাদন ব্যবস্থাপনার জন্য কেবল কায়িক শ্রম নয়, বিশেষ দক্ষতার প্রশিক্ষিত দাসের প্রয়োজন থেকেই নতুন আরেক ধরনের দাসের উন্মেষ ঘটে, আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক গুচ্ছ পূঁজি দাসের উন্মেষ ঘটে, এরা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও সামগ্রিক ভাবে ‘চাকুরে’ নামে পরিচিত, প্রশিক্ষিত এই দাসদের দক্ষতা ও একাগ্রতায় পূঁজি ও প্রভুদের মেদ দ্রুত ক্রমবর্ধমান। বিংশ শতাব্দীর গোরা থেকেই পূঁজি প্রাচুর্য আর অস্ত্রের সমন্বয়ে মানুষকে ভোগ লিপ্সার মায়া জালে এক অদৃশ্য দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে জগতটাই দাসত্বের স্থায়ী অবকাঠামো হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে যেখানে জন্মিলে দাসত্ব অবধারিত। জয় হোক পূঁজির, জয় হোক ক্ষমতার, জয় হোক শয়তানের আর জয় হোক দাসত্বের।।।

পরম সত্যি ঈশ্বর বলে কিছু নাই!?

আমরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আর মতবাদকে এক সাথে গুলিয়ে ফেলি! যে কোন মতবাদে কিছু চলক থাকে যা কিছু নির্দিষ্ট অনুমানে এর অধীন তত্ত্বের সাথে পর্যবেক্ষণে মিলে যায় যতক্ষণ না অন্য কোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয়৷ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কখনই ভুল নয় কিন্তু সীমাবদ্ধ কারণ কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকেই কেবল মাত্র ঐ তত্ত্ব দিয়ে প্রমান করা যায় না, একে প্রমান করতে আরো অনেক তত্ত্বের উপর নির্ভর করতে হয়, যখন কোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তখন জন্ম নেয় নতুন তত্ত্ব৷ এভাবেই বৈজ্ঞানিক মতবাদকে ভড় করে নবতর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈঠা বেয়ে আমাদের জ্ঞানের তরীতে প্রগতি এগিয়ে চলেছে! 

অতি বৃহৎ যেমন গ্যালাক্সী এবং অতিক্ষুদ্র যেমন ইলেকট্রন সরাসরি পর্যবেক্ষন যোগ্য নয়, আর এখানেই তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের জন্ম যেখানে জানা জ্ঞানের মাধ্যমে অজানাকে পর্যবেক্ষন করা হয়। ঈশ্বর প্রশ্নে নানা বৈজ্ঞানিক মতবাদ আছে যার অধীন তত্ত্ব গুলো পর্যবেক্ষণে মিলে গেলেও সে গুলি অন্য কোন না কোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক! ঈশ্বর প্রশ্নে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় মতবাদ হল বিগ ব়্যাং, মুলত মোল্লা স্টিফেন হকিং এর প্রধান পুরোহিত হিসেবে আবির্ভূত হবার পর থেকেই বিগ ব্যাং এর জনপ্রিয়তা উর্ধ মুখী! বিগ ব্যাং মুলত মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্ব কিন্তু এই সৃষ্টি প্রশ্নেই ঈশ্বরের ভূমিকা চলে আসে। ডাঃ জাকির নায়েক সহ আরও অনেক ধর্মীয় বুদ্ধিজীবিদের আলোচনায় ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে বিগ ব্যাং তত্ত্ব ব্যবহার করতে দেখেছি আবার নাস্তিকদের আলোচনা একই তত্ত্ব বিপরীত কারণে ব্যবহার করতে দেখেছি। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসাবে বিগ ব্যাং মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্ব হলেও আমরা ঈশ্বর প্রশ্নে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করি এই তত্ত্ব!

সব মতবাদের মতই বিগ ব্যাং মতবাদেও চলক আছে যা অন্য তত্ত্বের মাধমে অনুমিত মান বিগ ব্যাং এর পর্যবেক্ষনের সাথে মিলে যায় কিন্তু তাতে কিছু সমস্যা আছে যার কোন উত্তর এখনও জানা নাই!

যেমনঃ
1় বিগ ব্যাং বিশ্বাস করলে আপনাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে আপনার বাড়ী রাতে যত বড় ছিল সকালে তার চেয়ে বড় সন্ধায় তারচেয়ে আরো বড় এমনি ভাবে নিরন্তর বেড়ে চলেছে আপনার দেহ, চেয়ার টেবিল সব কিছু মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সমান হারে৷

2় কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিশ্বাস করলে আপনাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে আমাদের চারপাশের কোন কিছুই বাস্তব নয়, এগুলোর অস্তিত্ব পর্যবেক্ষকের কারনে, পর্যবেক্ষক যখন দেখে না সেটা তখন সেখানে থাকে না৷ বিগ ব্যাং অনেক খানিই নির্ভরশীল কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর মতবাদের উপর!

3় বিগ ব্যাং বিশ্বাস করলে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে সময়ের একটা সুনির্দিষ্ট শুরু আছে কিন্তুু এই শুরুর সময় কে নির্ধারণ করল সেটা অজ্ঞাত, কেন যখন বিগ ব্যাং বা সময় শুরু হল তার আগে পরে কেন হল না তা অমিমাংসিত, যখন কিছুই ছিল না তখন বিগ ব্যাং হলো কোথায় তাও অজানা! 

সর্বপরি ঈশ্বর প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর পাওয়া সম্ভব কিনা তা অমিমাংসিত রেখেও বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ঈশ্বর প্রশ্নের সমাধানে আমাদের বিজ্ঞান এখনও সক্ষম নয়৷ তাই বৈজ্ঞানিক ভাবে এখন পযর্ন্ত নাস্তিক হবার কোন সূযোগ নাই, ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ত্ব কোনটাই এখনও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পরিধির মধ্যে নাই তাই বিশ্বাসই শেষ আশ্রয়! উপরন্তু বিগ ব্যাং এর অনুমানে কিছু পরিবর্তন আনলে বরং তা ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে একটা প্রমান হতে পারে যেমন, ঈশ্বর যখন 'হও' বলেছে তখন বিগ ব্যাং হয়েছে আর ঈশ্বরের নিয়মই বৈজ্ঞানিক সূত্র৷
মোল্লা হকিং এর ঈশ্বর বিষয়ক কিছু বয়ানে তথাকথিত নাস্তিকেরা খুবই উল্লসিত, কিন্তু আমি আতংকিত কেয়ামতের ভয়ে! সাম্প্রতিক ব্ল্যাক হোল বিষয়ক আবিষ্কারে সামান্য কিছু রদ বদল ঘটালে হাশরের মাঠের সাথে ব্ল্যাকহোল হুবহু মিলে যায়, দুটোই ওয়ান ওয়ে সেখান থেকে ফিরে আসার উপায় নাই এবং বর্তমান মহাজগত থেকে সেখানে ভীন্ন নিয়ম৷

বড্ড ছোট এই গ্রহটা!

এই তো মাত্র কয়দিন আগে শরণার্থী বা উদ্বাস্তু নামক সভ্যতার কলঙ্ক আমাদের এশিয়ার নব্য কুলীন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল, সম্প্রতি এই কুলাঙ্গারেরা ইউরোপের সাজানো ঘড় নোংরা করে তাদের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। এটা কি মামুর বাড়ির আবদার যে তাদের থাকার জায়গা দিতে হবে? সাত শ' কোটি মানুষের জন্য দুনিয়ায় জায়গা অনেক কম, সে জন্যই তো দুবাইকে কোটি কোটি ডলার খরচ করে সাগর ভরাট করে থাকার জায়গা বানাতে হল!

দুনিয়ার সব মানুষ যদি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ছয়টি দেশের যে কোন একটিতে বসবাস করে তাহলেও সে দেশ বর্তমান বাংলাদেশের চেয়ে কম ঘন বসতি পূর্ণ থাকবে, আর এখন পর্যন্ত দুনিয়ার মাত্র চার শতাংশ জায়গায় কেবল জন বসতি গড়ে উঠেছে। আর মানুষ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই প্রমাণ করেছে যে তারা কেবল জমি পেলেই তাদের ক্ষুধা মেটাতে পারে, তাহলে সামান্য সাত শ' কোটি মানুষের থাকা খাওয়ার অভাব হবে কেন এই গ্রহে???????????!!!!!!!!!!!!!!

এসএমই ধোকায় এন্টারপ্রেনর!

সাম্প্রতিক কালে 'এসএমই' শব্দটি আকাশে বাতাসে সর্বত্রই ভাসে। দাতা, ত্রাতা, সরকার, রাজনীতিবীদ, সূশীল সমাজ,আমজনতা সবাই ঐক্যমত যে এসএমই খাতের উন্নয়ন ছাড়া আমাদের মুক্তি নাই, সঙ্গত কারণেই এই মুক্তির লক্ষ্যে প্রচেষ্টারও কোন কমতি নাই, মাঝে মাঝেই এখানে সেখানে সাফল্যের হাঁসিরও ঝংকার শোনা যায়! 
ভালই তো!! 
ভাল না!?

এসএমই এবং এন্টারপ্রেনর শব্দ দুটি বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত। বিশ্বব্যাপী এসএমই শব্দটি ব্যবহৃত হয় রিপোর্টিং এর উদ্দেশ্যে লগ্নী পুঁজি ও নিয়োজিত মানব সম্পদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। ঐতিহ্য গত ভাবে ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের বোঝাতে এন্টারপ্রেনর শব্দটি ব্যবহৃত হলেও সাম্প্রতিক কালে শব্দটি নতুন অর্থে নতুন মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। এন্টাপ্রেনর বলতে বোঝান হয় বিশেষ করে সেই সব ব্যক্তিকে যারা ঝুঁকি নিয়ে অথবা নিজস্ব মেধায় ঝুঁকি প্রশমিত করে সমস্যাকে লাভ জনক আর্থিক সম্ভাবনায় অথবা বর্তমান সমাধানকে সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে আরও সহজ বা উপকারী সমাধানে রূপান্তর করে অথবা প্রথাগত কোন কাজকেই স্বাধীন ভাবে জীবন ধারণের মাধ্যমে পরিণত করে। সাম্প্রতিক দশক গুলোতে এই এন্টারপ্রেনরদের ভূমিকা ও সাফল্য এতটাই জোরালো যে অনেকেই বলে থাকেন বর্তমান অর্থনীতির চালক ও নিয়ন্ত্রক এই এন্টারপ্রেনরগন। এই বোধোদয় থেকে বেশীর ভাগ দেশই তাদের আর্থিক ও অর্থনৈতিক নীতি কাঠামোসহ উন্নয়ন অবকাঠামো এন্টারপ্রেনর বান্ধব হিসেবে ঢেলে সাজাচ্ছে, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিকাশমান 'মিডল ক্লাস' এর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে এন্টারপ্রেনর উন্নয়ন এখন বহুল পরীক্ষিত ও সফল নীতি হলেও অজ্ঞাত জাদুর ঘোরে আমরা এখনও উল্টো পথে হাঁটছি। যদিও অর্থ গত ভাবে এসএমই ও এন্টারপ্রেনর শব্দ দুটির ভিন্ন অর্থ এবং ভিন্ন বিষয়ে ব্যবহৃত হলেও অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশে শব্দ দুটি প্রায় ক্ষেত্রেই পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় আমাদের নীতি কাঠামোতে এই শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয় অর্থহীন ভাবে অথবা কুমতলবে। প্রায়ই এন্টারপ্রেনর উন্নয়নের নামে মাঝে মাঝে এসএমই খাত এর নানা তথ্য উপাত্তের খিচুড়ি বিলানো হয় যার সাথে এন্টারপ্রেনরদের কোন সম্পর্ক নেই। বাংলা সত্যি হল বাংলাদেশে এন্টারপ্রেনরদের জন্য এখন পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যাংকিং বা আর্থিকসহ কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক সেবার কোনই সুযোগ নেই।
আমাদের নীতি অবকাঠামোতে এন্টারপ্রেনর উন্নয়ন আর এসএমই উন্নয়ন একই অর্থে ব্যবহৃত হয়! বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই নীতিমালা অনুযায়ী এই খাতে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্য, "Real entrepreneurs who are directly involved in SME sector". আর যে সমস্ত ব্যাংক এসএমই খাতে ঋণ দেয় তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী এই খাতে ঋণ প্রাপ্তির নূ্যনতম যোগ্যতা হল কম পক্ষে ১/২ বছর লাভ জনক ভাবে ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা! এই নিয়মে আর যাই হোক কোন এন্টারপ্রেনর ঋণ পাওয়ার কথা নয় বাস্তবে কেউ পায়ও না। তত্ত্ব অনুযায়ী ৮০% এর বেশী এন্টারপ্রেনর প্রথম বছর পার করতে পারে না, খুব অল্পই দ্বিতীয় বছর পার করে, আর ক্ষুদ্র অংশই লাভ জনক অবস্থায় পৌছায়। নানা বন্ধুর পথ পারি দিয়ে অসীম সাহসী ও সৌভাগ্যবান এন্টারপ্রেনর যখন লাভের মুখ দেখে তখনই এই লাভে ভাগ বসাতে টিয়া হিসেবে ব্যাংক মহাজন হাজির হয় এসএমই উন্নয়নের নামে। প্রকৃত পক্ষে এসএমই খাতে ব্যাংক গুলির ঋণ দেবার কারণ কম ঝুঁকিতে উচ্চ সূদ আয়ের লোভ, এখানে নীতি বা মূল্যবোধের বালাই নাই। 
দাতাগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাজন ব্যাংক, নানা নামের নানা ঢং এর আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সবারই নজর এখন এসএমই এর দিকে। কিন্তু সব এসএমই এর দিকে নয়, শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত ও লাভজনকভাবে পরিচালিত এসএমই এর দিকে। যারা অনেক বন্ধুর পথ পারি দিয়ে এখন একটা সুবিধাজনক অবস্থায় এসেছে তাদের লাভে ভাগ বসানোর জন্যই এতো আয়োজন। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য দাতা ও বন্ধুরা মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেমন, এডিবি ১২৬.৬৭ মিলিয়ন ডলার, প্রকল্প নং-৩৬২০০, আগস্ট ২০০৯। প্রকল্পের মেয়াদ অক্টোবর ২০০৯ হতে সেপ্টেম্বর ২০১২ । এই প্রকল্পে এডিবি ৭৬ মিলিয়ন ডলার দেবে ৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য ঋণ হিসাবে। যার সূদের হার গ্রেস পিরিয়ডে ১% এবং অবশিষ্ট সময়ের জন্য ১.৫% । স্বল্প সুদের কারণে দৃশ্যত এটি একটি মহৎ উদ্যোগ মনে হলেও এর আসল মোজেজা অন্য জায়গায়। কারণ এই ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হবে। আর অতীত অভীজ্ঞতানুযায়ী টাকার অবমূল্যায়নের ধারাবাহিকতায় আগামী ৪০ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বর্তমানের অর্ধেকেরও নীচে নেমে আসবে। বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার কারণেই তা অনিবার্য। ফলে গৃহীত অর্থের বহুগুণ বেশী পরিশোধ করতে হবে ভবিষ্যতে। শুধু কি তাই! এই ঋণের সাথে বিনামূল্যে আরও আছে হাজারো শর্তের বেড়াজাল। এই ঋণ বা বিনিয়োগের আসল লক্ষ্য মুনাফা কামানো নয়, শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন। পুঁজি’র সুবিধা মত সবকিছু সংস্কার, বদল করার শর্ত। সবধরনের পুঁজি যাতে নির্বিঘ্নে কারবার করতে পারে তার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা অর্জন। বিশ্বব্যাংকের সূত্রে এডিবি’র হিসাব মতে ২০০৬ সালে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারী এন্টার প্রাইজ এর সংখ্যা ছিল মোট ৬.৮ মিলিয়ন (সে হিসাবে ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০মিলিয়নের উপরে এবং লাভজনক ও নিশ্চিত বিনিয়োগের সুযোগও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে), তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন সফল উদ্যোক্তা আছে যাদের কাছে নিশ্চিন্তে ৩৯৫.৯৭ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করা যায়! নতুন এসএমই প্রতিষ্ঠা বা কোন রকমে টিকে থাকাদের উন্নয়নের কোন ব্যবস্থা এই প্রকল্পে নেই। কারণ প্রকল্পটির উদ্দেশ্যই ঋণের এই বিস্তৃত নতুন বাজারে পুঁজি’র মুনাফা নিশ্চিত করা, এসএমই খাতের উন্নয়ন নয়। সব ধরণের পুঁজি যাতে নিরাপদে স্ব স্ব কারবার করতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করাই দাতাগোষ্ঠীর কাজ। সেই পুঁজির বিকাশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার প্রচ্ছন্নভাবে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী যেসব উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও সামর্থ্য আছে কেবল তারাই এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। তেলীর মাথায় তেল নয়, এ যেন পুঁটিমাছ দিয়ে বোয়াল ধরা আর কি! 
যে ঋণের ঝুঁকি যত বেশী সে ঋণের সূদ তত বেশী আর সহায়ক জামানত বিহীন ঋণের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি সম্পূর্ন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। প্রথা ও তত্ত্ব গত ভাবে এসএমই ঋণ জামানত বিহীন তাই এর উচ্চ ঝুঁকির কারণে সূদের হার উচ্চ হবে কিন্তু ঝুঁকির মাত্রার ভিন্নতা অনুযায়ী প্রত্যেক ঋণের সূদের হারেও ভিন্নতা থাকার কথা। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তত্ত্ব অকার্যকর। বাস্তবে এখানে তথাকথিত সহায়ক জামানত যুক্ত কর্পোরেট ঋণের ঝুঁকির চেয়ে এসএমই ঋণের ঝুঁকি অনেক কম হলেও নানা তত্ত্বের গোলক ধাঁধায় এসএমই ঋণের সূদ আয় বৃহৎ ঋণের দ্বিগুনেরও বেশী, আরও অদ্ভূত ভাবে একই খাতের সকল ঋণের সূদের হার ব্যক্তি নির্বিশেষে একই যা ঋণের ঝুঁকি তত্ত্বের মৌলিক পরিপন্থী। অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানের জন্য এই খাত এখন সবচেয়ে লাভ জনক ও সম্ভাবনাময় হওয়ায় সবাই নানা বাহারী নামে ঝাঁপিয়ে পরেছে এসএমই খাতের ত্রাতা হিসাবে, আসলে ধান্দা সবার নিজের নিজের আর তার প্রমান ব্যাংক গুলির স্থিতি পত্রেই আছে।

Monday, September 21, 2015

মিজানের প্রবন্ধ গুচ্ছ!

বাংলা প্রবন্ধ সমগ্র!

 

1.      সব কিছু নরমাল!!! September 17, 2015

2.      প্রতারণার নতুন নাম ‘স্পুফিং-Spoofing’! September 11, 2015

3.      অরণ্যে একাকী সরস্বতী!!! September 10, 2015

4.      সাহিত্যের রাজনীতি ও রাজনীতির সাহিত্য! September 5, 2015

5.      বিষাক্ত জ্ঞান আর দাসত্বের শিক্ষা! September 5, 2015

6.      পরিবেশ নয়, পরিবার বান্ধব ধরনী চাই! September 4, 2015

7.      দাস কাব্য! September 4, 2015

8.      লাখ পতি ছাত্র! August 24, 2015

9.      ঈশ্বরেরও পুঁজি লাগে, কৃষকের লাগে না! August 22, 2015

10.  জনগনের মুরগী আর ঈশ্বরের শেয়াল! August 9, 2015

11.  অসত্য গপ্প! August 7, 2015

12.  দারিদ্র্য মানুষের প্রথম পাপ! August 1, 2015

13.  দরিদ্র ছাত্র দিয়ে কোনো দেশ ধনী হয় না! May 27, 2015

14.  ধর্মের অধর্ম ও অধর্মের ধর্ম! May 20, 2015

15.  আইডিয়া লুকানোটা কোন ভাল আইডিয়া নয়! May 15, 2015

16.  প্রশ্নের বন্যায় ভেসে যাক অন্যায়! May 6, 2015

17.  বিগ ব্যাং কি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নাকি মতবাদ! May 4, 2015

18.  রাজনীতিবিদ উৎপাদন প্রকল্প! May 2, 2015

19.  কাম করে কামু, কলা খায় মামু!!! April 30, 2015

20.  পান্তা ইলিশ! April 13, 2015

21.  সব জ্ঞানই ওয়ান টাইম! April 6, 2015

22.  ব্যাংকিং বিবর্তনে আপদের আবর্তন! March 28, 2015

23.  জিয়ে মৌলবাদীতা! March 27, 2015

24.  ব্যাংকনামা! March 27, 2015

25.  ঋণের জাল! March 27, 2015

26.  অর্থনৈতিক মন্দা’ March 27, 2015

27.  ব্যার্থনৈতিক অর্থনীতি! March 27, 2015

28.  আল্লাহ মেঘ দে পানি দে উন্মাদনা দে রে।। March 27, 2015

29.  দরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল! March 27, 2015

30.  বাংলাদেশের অনলাইন ব্যাংকিং! March 27, 2015

31.  আত্মঘাতি দেশ প্রেম! March 27, 2015

32.  বাম আফিম! March 27, 2015

33.  স্কুল ব্যাংকিং! March 27, 2015

34.  ইসলামী ব্যাংক!!! March 27, 2015

35.  চেতনার বানে কাপড় ভাসে আসমানে ! March 27, 2015

36.  এসএমই খাতের উন্নয়ন ! February 28, 2015

37.  জেনেটিক বিজ্ঞান ও প্রতিবন্ধীতা! February 28, 2015

38.  রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতি মানবতার আসল ভীতি! January 28, 2015

39.  মোবাইল ব্যাংকিং নাকি গিনিপিগ ব্যাংকিং!!! October 14, 2014

40.  নোনা কাব্য! September 19, 2014

41.  গরু মেরে জুতা দান! September 18, 2014

42.  জ্ঞান বৃক্ষ! September 6, 2014

43.  বাংলাদেশের অর্থনীতির নায়ক! June 30, 2014

44.  মাইক্রো ক্রেডিটের বন্যা, অতঃপর সুনামি (!?) June 23, 2014

45.  উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বাণিজ্য! June 21, 2014

46.  বাঁচতে চাও? পরিবার বাঁচাও। June 20, 2014

47.  বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও আমরা বোকা বান্দা! June 13, 2014

48.  দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি নাকি উর্ধগতি’র দ্রব্য!? June 11, 2014

49.  বিচারের কাহিনী! June 11, 2014

50.  এখানে বেঁচে থাকাটাই মহাকাব্য! June 11, 2014

 

 

English Articles!

 

1.      Familipreneurship: A comprehensive approach of Entrepreneurship! June 11, 2014

2.      HOW TO PROMOTE FAMILIPRENEURSHIP! June 12, 2014

3.      Why Familipreneurship? February 23, 2015

4.      Family Based Capitalization (FBC) June 11, 2014

5.      Why Family Based Capitalization (FBC)? June 12, 2014

6.      Unlock your potentials “Be your own BOSS”! February 23, 2015

7.      Familipreneurship: The Ultimate Solution of Poverty! February 17, 2015

8.      We Must Be HAPPY to LIVE & GROW! January 16, 2015

9.      What's harming in Bitcoin!? January 28, 2015

10.  Analogue Finance in Digital era! January 28, 2015

11.  Fakenomics! January 16, 2015

12.  The one and only error of nature! April 9, 2015

13.  The Strongest and the Weakest Currency of History! April 8, 2015

14.  capiTALISTS!‪?#NOCredit,NODonation! April 30, 2015

15.  Leader-Manager-Executive! May 4, 2015

16.  Being a noble rich is nobler than being a wiser poor! May 16, 2015

17.  Profits are better than the wages! May 23, 2015

18.  F**k the Human to regain your Birth Rights!!! August 7, 2015

19.  Why Mobile Operators Should Not Be Allowed in Banking May 15, 2015

20.  Ultimate solution to poverty is being wealthy! May 28, 2015

21.  Decision of Education, Profession & Marriage. May 28, 2015

22.  Latest is not always the best! May 28, 2015

23.  In this world of changes we need not to be a... May 28, 2015

24.  We are not motivated by the knowledge of... May 28, 2015

25.  Our economists teach & preach us how we should... May 28, 2015

26.  Family Enterprise as a tool for poverty reduction... May 28, 2015

27.  Beware of toxic knowledge! May 28, 2015

28.  We must LEARN to be happy to LIVE & GROW! May 28, 2015

29.  In a changing world Leaders' success depends on... May 28, 2015

30.  We are dominated by our faiths & beliefs! May 28, 2015

31.  'Social Business' and 'Socially Responsible... May 28, 2015

32.  'Capital' and 'Wealth'! May 28, 2015

33.  What is more powerful? Knowledge or beliefs! May 28, 2015

34.  The Strongest and the Weakest Currency of History! May 28, 2015

35.  Money is the most intelligent and semiconductor... May 28, 2015

36.  To be a good leader, we need to be a good... May 28, 2015

37.  Happiness is not an optional issue! May 28, 2015

38.  The one and only error of nature! May 28, 2015

39.  Knowledge and Wisdom! May 28, 2015

40.  It's time for the servant leadership!! May 28, 2015

41.  It's matter what we learn! Learn to be happy!! May 28, 2015


42.  If you want to know the future of a person, look... May 28, 2015


https://www.linkedin.com/today/author/120595756