Saturday, May 30, 2015

#FairWarning, #বিবেকবদ্ধসতর্কীকরণ এবং #LegalDisclaimer!


#Fair Warning:

I do not play well with communists, socialists, Liberalist, Jihadists, Humanists, Fundamentalists, Nationalists or any other '--ist' supporters! 

#বিবেকবদ্ধ সতর্কীকরণ: 

1) এই প্রোফাইলে পাবলিকলি প্রকাশিত মতামত কোন ক্রমেই পাবলিকের নয় তা নিতান্তই প্রোফাইল মালিক এর ব্যক্তিগত দৃষ্টি ভঙ্গির বিকলাঙ্গ প্রকাশ মাত্র যার সাথে স্বর্গ-মর্ত-নরকের জীবিত বা মৃত কিম্বা অর্ধ মৃত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কিম্বা কোন যন্ত্র বা জন্তু এমন কি কোন বই বা কম্পিউটার প্রোগ্রামের বা ডিএনএ ব্যাংকে সংরক্ষিত ডিএনএ নমুনার কোন সম্পর্ক বা দায় নাই।
2) দেয়ালে প্রকাশিত মতামতের বিষয়ে প্রোফাইল মালিকের অন্ন দাতা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যতের কোন মালিক, শ্রমিক, শেয়ার হোলডার বা শুভানুদ্ধায়ীদের কোন সংশ্লিষ্টতা বা ইন্ধন নাই। প্রোফাইল মালিককে আশ্রয় দাতা রাষ্ট্রের বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যতের কোন সরকারী কর্মচারী বা সরকারের কর্মীদের কোন দায় বা সংশ্লিষ্টতা নাই তবে সম্পদ থাকিলে সকলই তাহাদের।
3) এখানে প্রকাশিত যে কোন মতামত অনুমতি সহ বা ছাড়াই যে কোন উপায়ে যে কোন মাধ্যমে সূত্র উল্লেখ সহ বা ছাড়াই বাণিজ্যিক, অবাণিজ্যিক বা দাতব্য যে কোন উদ্দেশ্যে প্রকাশ, পরিবহন ও বিতরন করা যাবে (যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন আপত্তি না থাকে) এমনকি তা ছাপানো কাগজে ঠোঙা বা মিষ্টির প্যাকেট বানানো সহ টয়লেট পরবর্তী কাজেও ব্যবহার করা যাবে।
4) এই প্রোফাইলে প্রকাশিত কোন মতামতের প্রতি কেউ আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ ঈমান আনলে বা আগ্রহ প্রকাশ করলে বা তদনুসারে কোন কর্ম সম্পাদন করলে কিম্বা শয়ন-স্বপন-জাগরনে বা কাজ ফেলে কোন চিন্তা করলে এই প্রোফাইলের মালিক ইহকাল বা পরকালে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা আদালত এমনকি স্বয়ং ঈশ্বরের নিকটও কোনক্রমেই দায়ী থাকবে না ।

#Legal Disclaimer:

This is publicly expressed #ExclusivePerception on own conception of miZan raHman© and does not necessarily endorse as Public Truth so exempted from all liabilities and damages for the consequences of Believing or Disbelieving may have, Misbelieving 100% PROHIBITED or at your own risk. Criticism always Hats off Welcome!!! 
miZan raHman©

দরিদ্র ছাত্র দিয়ে কোনো দেশ ধনী হয় না! - #MillionaireStudent

বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ পৃথিবীর দরিদ্রতম ছাত্রদের সমাজ! 
প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো তো দূরে থাক, আমাদের নৈতিকতায় ছাত্রদের কিছু টিউশানি জাতীয় কর্ম ছাড়া অন্য কোন ভাবে অর্থ উপার্জন অভিভাবক সহ সকলেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে।ছাত্ররা কেবল লেখা পড়া ও স্বেচ্ছা সেবার কাজ করবে এমনটাই সামষ্টিক প্রত্যাশা। বিশেষ করে কোন ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট হওয়াটা সবাই খুব বাঁকা চোখে দেখে। ছাত্রদের হাতে ‘বেশী টাকা’ দেওয়া বা যাওয়া বা থাকা আমাদের সামাজিক সংস্কারে ক্ষতিকর গণ্য করা হয়। অনেক ‘কঠোর’ অভিভাবক তো তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য কষ্ট করে হলেও নিজেই সব কিছু কিনে দেন, এমনকি স্কুলের পাওয়ানাসহ।
অর্থই অনর্থের মূলে আর দরিদ্র জীবন মহৎ জীবন এমন নৈতিকতার আচ্ছন্নতায় সামর্থ্য নির্বিশেষে সন্তানদের দারিদ্রের মধ্যে বড় করাটা গৌরবের এবং জীবনের দরকারি শিক্ষার অংশ মনে করা হয়। হাল আমলের অপভ্রংশ পার্ট টাইম ছাত্র আর ফুল টাইম ব্যবসায়ীদের কথা বাদ দিলে, বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের যারা টিউশানি বা অন্য কোন ভাবে আয় করে তাদের সিংহ ভাগই আসলে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে করে যাদের ‘খরচ’ দেবার অভিভাবক না থাকায়। স্বাভাবিক জীবনের অংশ হিসেবে বিদ্যা অর্জন আর অর্থ উপার্জন বিপরীতার্থক! অভাবী হলেও ছাত্রদের খরচ অবিভাবকগন সম্প্রদান কারকে দিবেন এটাই রেওয়াজ। এই রেওয়াজে আর্থিক ভাবে ছাত্র সমাজ লাভবান হলেও অর্থনৈতিক ভাবে তারা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাত্রদের ব্যালেন্স-সীট শূন্য বা তার কাছাকাছি থাকে সব সময়, তারচেয়েও খারাপ বিষয় এদের জীবনের আর্থিক টার্ন ওভার খুবই সীমিত। শ্রেণী হিসাবে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ পৃথিবীর দরিদ্রতম ছাত্রদের সমাজ!
#HealthyFamily
#MillionaireStudents 
#BillionairesCommunity 
#WealthyNation
#Familipreneurship

ধর্মের অধর্ম ও অধর্মের ধর্ম!

দেখতে দেখতে ধর্মের বয়স তো কম হল না! অন্য সকল বিষয়ে মানুষে মানুষে মত পার্থক্য দিনে দিনে ক্রম হ্রাস মান হলেও একমাত্র ধর্মের ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম বরং তা অনেক ক্ষেত্রেই ক্রমবৃদ্ধি মান। এর একমাত্র কারণ অন্য সকল বিষয় নিয়ে মানুষে মানুষে আলোচনা হলেও ধর্ম নিয়ে কেবল কপট বা আসল ঝগড়া এবং জিহাদ বা ক্রুসেড ছাড়া কখনই প্রকৃত আলোচনা হয় না। যদি হত তাহলে এত দিনে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মতানৈক্য দূর হয়ে যেত অথবা একেবারেই সার্বজনীন সহনশীল পর্যায়ে থাকত যা কেবল বৈচিত্র্য আনত বিভাজন নয়।
পৃথিবীর সব ধর্ম ও বিজ্ঞান এক মাত্র যে বিষয়ে ঐকমত্য তা হল এই মহাবিশ্ব পরস্পর নির্ভরশীল একটা সুপার সিস্টেম যার অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য সিস্টেম ও সাব সিস্টেম যা একই সুপার সিস্টেমের অংশ। যে কোন সিস্টেমে কালের বিবর্তনে এর অন্তঃস্থিত অসামঞ্জস্য হ্রাস পায় অথবা বিবর্তিত হয়ে সামঞ্জস্য বিধান করে সিস্টেমের অস্তিত্ব বজায় রাখে যা এনট্রপি নামে পরিচিত, আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম যদি না কোন শক্তি এর অন্যথা ঘটায়। পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই সিস্টেম থিওরিকে সমর্থন বা অ-প্রতিবাদ করলেও প্যারাডক্সিক্যালী এই বিধির একমাত্র ব্যতিক্রম আমাদের ধর্মীয় সিস্টেম নিজেই। বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ সমস্যাই হয় ধর্ম থেকে অথবা ধর্মের জন্যে সৃষ্ট। এই সমস্যার একমাত্র কারণ আলোচনা না হওয়া এবং এর সমাধানও একমাত্র আলোচনাতেই নিহিত আছে। এ আলোচনা শেষ হতে কয়েক বছর থেকে দশক বা শতক এমনকি হাজার বছরও লাগতে পারে তবে অবশ্যই তা একদিন ধর্মীয় এন্ট্রপি বিধান করবে ভিন্নতা সত্ত্বেও। দুর্ভাগ্য জনক ভাবে সে আলোচনা এখনও শুরুই হয়নি!
আমাদের নাগরিক সমাজের বড় একটা অংশ নিজেদের শান্তি প্রিয় মনে করেন। শুধু মনেই করেন না শান্তির স্বার্থে তারা অনেক কিছু ত্যাগও করেন। তবে বেশীর ভাগ সুশীল নাগরিক সাধারণ যে ত্যাগটি করেন তা হল ধর্ম নিয়ে পাবলিকলি আলোচনা একেবারেই পরিত্যাগ! এমনকি অনানুষ্ঠানিক বা সামাজিক আড্ডা আলোচনাতেও সচেতন উদাসীনতায় এড়িয়ে যায়। আর যারা আলোচনাতে অংশ নেয়, গুন বিচারে তারা আসলে ঝগড়া ঝগড়া খেলে। প্রত্যেকেই অকাট্য যুক্তিতে নিজ মতের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরলেও আসলে কোন আলোচনা হয় না কারণ অন্যের যুক্তি কেউ শোনেই না, বিবেচনা করা তো দূরে থাক। আর যে আলোচনায় কোন বিবেচনা করার বিষয় নাই তা অবশ্যই ঝগড়া অথবা পাগলের প্রলাপ!
ধর্মের সাধারণ মানে যদি জীবনাচরণ হয় তাহলে পৃথিবীতে তিন ধরনের মানুষ আছে। প্রথমত ধার্মিক যারা মূলত দুই প্রকার, যথা আসমানে সৃষ্ট ধর্মানুসারী যেমন মুসলমান, খৃষ্টান ইত্যাদি এবং জমিনে সৃষ্ট ধর্মানুসারী যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি। দ্বিতীয় শ্রেনী হল অধার্মিক বা নাস্তিক যাদের ঘোষিত ধর্ম বিজ্ঞান হলেও পালিত ধর্ম নিজের বিশ্বাস ও পছন্দের মতবাদ তাড়িত। আর অন্য টি হল ধর্মাভিনেতা বা বকধার্মিক যারা ধর্ম জানলেও ততখানিই মানে যতখানি ধার্মিক সাজতে দরকার, আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ধর্ম পালনের কারণ যতটা না ধর্মীয় তার চেয়ে বেশী জাগতিক সুবিধা। এরা গিরগিটি শ্রেনীভুক্ত হওয়ায় ধার্মিক বা নাস্তিক যে কোন খোলসেই থাকতে পারে বকধার্মিক এবং এরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ!
ধার্মিক ও নাস্তিক উভয়ের একটাই অন্বেষণ আর তা হল "সত্য-সুন্দর-ভাল"। সে জন্য ধার্মিকেরা নির্দিষ্ট পূর্বসূরিদের পথ ও মতকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানে তা অনুসরণ করে স্থীর বিশ্বাসে ও বিনা প্রশ্নে। আর নাস্তিকেরা "সত্য-সুন্দর-ভাল" খোঁজে নিজ দায়িত্বে ও নিজের পছন্দের মানুষ ও মতবাদের কাছে যা আখেরে মূলত বিশ্বাস নির্ভর! তাছাড়া অধার্মিক আস্তিক ও ধার্মিক নাস্তিক নামক অপভ্রংশ আছে যারা আসলে সিংহ ভাগ ধর্মীয় ফ্যাসাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ।
আমাদের বর্তমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দুই লাখ বছরের বেশী সময়ের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে এ মতানৈক্য দূর করা বা সহনশীল মত পার্থক্যে আসা সম্ভব। যদিও এখন পর্যন্ত আস্তিক বা নাস্তিক উভয়েই আসলে বিশ্বাসী! কারণ এদের কারও কাছেই নিজের মতের স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই! একদল বিশ্বাস করে 'ঈশ্বর আছেআর অন্যদল বিশ্বাস করে 'ঈশ্বর নাই'! যদিও উভয় পক্ষের কাছেই কিছু আপাত অকাট্য যুক্তি আছে। কিন্তু যুক্তি আর প্রমাণ এক জিনিস নয়! দৃশ্যত অযৌক্তিক মনে হলেও সাম্প্রতিক কালে অত্যাশ্চর্য ভাবে বেশীর ভাগ আস্তিক ও নাস্তিক উভয়ের কাছেই বিগ ব্যাং থিওরিই তার মতের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি! বিশেষ করে কিছু জনপ্রিয় তোতা পাখিরা বিগ ব্যাং এর সত্যতা সম্পর্কে অসংখ্য ঐশী প্রমাণ হাজির করেছেন যা বিগ ব্যাং আবিষ্কারের বহু আগে থেকেই কিতাবে ছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিগ ব্যাং আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত তাঁরা সেটা খুঁজে পাননি! যদিও বিগ ব্যাং এখন পর্যন্ত বেশ কিছু 'যদি', 'কিন্তু', 'তবেজাতীয় চলক এর উপর প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক মতবাদ মাত্রপর্যবেক্ষণে প্রমাণিত কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়। এই চলক গুলির যে কোন টির সামান্য হেরফেরে সব কিছু বেমালুম বদলে যেতে পারে। তাত্ত্বিক পদার্থ বিদ্যার অনেক মৌলিক ধারণাই গত একশ বছরে বদলে গেছে। সে জন্য বিগ ব্যাং মূলত এম থিওরি (কোন নির্দিষ্ট তত্ত্বের বদলে একগুচ্ছ তত্ত্বের যখন যেখানে যেটা লেগে যায়!) নির্ভর হওয়ায় তত্ত্ব হিসাবে বিগ ব্যাং এখনও মোটেই বিগ নয় একেবারে আঁতুড় ঘড়েই আছে, আগামীতে আরও পরিপক্ব হবে আর সেই সাথে বিবর্তিত হয়ে নবতর রূপে আবর্তিত হবে! কিন্তু সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় বিগ ব্যাং যত বড়ই হোক না কেন তা কখনই ঈশ্বর প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারবে না কারণ বিগ ব্যাং এর মৌল স্বীকার্য হল জাগতিক স্থান-কাল বিগ ব্যাং এর ফল যা আবশ্যিক ভাবে এর পরে সৃষ্ট এবং বিগ ব্যাং এর আগের কোন ঘটনাই এই তত্ত্বে ব্যাখ্যা সম্ভব নয় যা ছাড়া ঈশ্বর প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। আবার স্থান-কালে অবস্থান করে কোন মতেই তার বাইরের ঘটনা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব নয়! ফলে বিগ ব্যাং তত্ত্ব শত ভাগ সঠিক হলেও তার মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ বা অপ্রমাণ কোনটাই সম্ভব নয়, তাই বিগ ব্যাং এর কাছেও ঈশ্বর প্রশ্নে বিশ্বাসই শেষ আশ্রয়!
জগতের অন্য সব ধর্মের সাথে ইসলাম এর মৌলিক পার্থক্য হল এটা রাষ্ট্রের জন্য আবশ্যিক এবং এর নাগরিকদের জন্য ঐচ্ছিক পালনীয় ধর্ম। অর্থাৎ অন্য সব ধর্ম যে কোন দেশে পালন করা গেলেও সাচ্চা মুসলমান হতে গেলে শুধু নিজে বা পরিবার বা সমাজ নিয়ে ধর্ম পালন করলেই হবে নাজান-মাল-ঈমান-আকিদা সব কিছু দিয়ে রাষ্ট্রকেও ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার জিহাদই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে। তবে ইসলামী রাষ্ট্রের সব নাগরিকদের ইসলাম পালন বা মুসলমান হওয়া আবশ্যিক না হলেও অন্য সব ধর্মের লোক জনকে বুঝিয়ে বা সম্পদের বিনিময়ে ধর্মান্তরিত করাটা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যিক ঈমানী দায়িত্ব ও পারলৌকিক সমৃদ্ধির সোপানই নয় নরক মুক্তির সহজ সস্তা কিন্তু অব্যর্থ উপায়। কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা না হলেও কেউ মুসলমান না হলে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাদের কোন রাজনৈতিক অধিকার থাকবে না, কিন্তু পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার থাকবে ইসলামের অন্তরায় সৃষ্টি না করে নিজ নিজ ধর্ম পালনের, সবাই ইসলামের 'হেফাজতে' স্ব স্ব ধর্ম পালন করবে! ইসলামের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হল কেন্দ্রীভবন অর্থাৎ ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত কাঠামো বদ্ধ ক্রম পূঞ্জী ভবন। পাড়ার জামাতে ওয়াক্তিয়া, গ্রামের জামাতে জুম্মা এবং অঞ্চলের জামাতে ঈদ এবং বিশ্ব জামাতে হজ্জ্ব এই ধারাবাহিকতারই অংশ। যেহেতু ইসলামের পূর্ণতা রাষ্ট্র কাঠামো নির্ভর আর এজন্যই কাঠামো বদ্ধ ক্রম পূঞ্জী ভবনের ব্যবস্থা। ব্যক্তি মুসলমানেরা নিরাপদ হলেও সংগঠিত মুসলমানেরাই যত আতংকের কারণ তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সকল ক্ষমতা জীবিদের জন্যই। ইসলাম একই সাথে ব্যক্তির জন্য জীবনাচার ও সমষ্টির জন্য রাষ্ট্রাচার। এই দ্বৈততাই এর সবলতা এবং দুর্বলতম দিক। তবে জীবনাচার হিসাবে ধর্ম ইসলাম কেবল মুসলমানের জন্য পালনীয় হলেও রাষ্ট্রাচার হিসেবে ইসলাম সকল নাগরিকের জন্য পালিতব্য। ইসলামের উত্থান এজন্যই আর সকলে গাত্রদাহের গুপ্ত কারণ। আর এই খানেই জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ দমনের নামে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার মূল কারণ নিহিত।
এটা ঐতিহাসিক প্রামান্য সত্য যে ইসলামের পরে এখন পর্যন্ত অন্য কিছুই এর মত বা বেশী প্রভাব আমাদের বিনির্মিত সমাজ ও যাপিত জীবনে ফেলতে পারেনি বরং এর বিপরীতে হাজারও তন্ত্রে-মন্ত্রে সমাধান খোঁজার চেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে ফলে বর্তমান পৃথিবীতে তন্ত্রের কোন অভাব নাই কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন তন্ত্রই এর ক্লাসিক রূপে কোথাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি, যে টুকু হয়েছিল তাও বিশুদ্ধ থাকেনি, সবই সচেতন ককটেল অথবা নিরুপায় ভেজাল তন্ত্র হিসেবে বিকশিত কিন্তু খাঁটি তন্ত্রের মুখোশে প্রকাশিত হয়েছে! সমাজতন্ত্রে ধোঁয়া হলেও কখনই আলোকিত করে আগুন জ্বলে উঠতে পারেনি এতে আগুন জ্বলার সমস্ত শর্ত বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কারণ পৃথিবীর সিংহ ভাগ মানুষ কোন না কোন ধর্মের অনুসারী আর সব ধর্মেই ধর্ম রক্ষা বড়ই ধর্মের কাজ এবং ধর্মহীনতার কাজে সহযোগীতা কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের জগাখিচুরী, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তত্ত্বের ইলিউশন সাধারনের বোধগম্য করতে না পারায় তাদের কাছে বাম, সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট সবটাই একটা ডিলিউশন যে তারা 'নাস্তিক' যা সকল ধর্মের মৌল স্বীকার্য ঈশ্বর বিশ্বাসের সাথে তিব্র সাংঘর্ষিক। অথচ কমিউনিজম ধর্মহীন হলেও সমাজতন্ত্র ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ কিন্তু তা কোন ক্রমেই ধর্ম বিরোধী কিম্বা ধর্মহীনও নয়! কেবল মাত্র মানুষের নরক ভীতি আর স্বর্গ প্রীতিই সমাজতন্ত্রের অপমৃত্যুর কারণ। 
  আসলে গুন বিচারে ইসলাম যত খানি ধর্ম তত্ত্ব তার চেয়ে অনেক বেশী রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং আমার বিবেচনায় তা বর্তমানে বাজারে আলোচিত, প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত অন্য যে কোন রাজনৈতিক তত্ত্বের চেয়ে উন্নততর। ইসলাম কি কারণে রাজনৈতিক মতাদর্শের বদলে ধর্ম নামে বাজারে এলো তা আমার কাছে একটা দুর্বোধ্য রহস্য! তবে ইসলাম যদি রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে বাজারে আসত তাহলে এর বিস্তার অর্ধ জাহান পর্যন্ত এসে আবার রিভার্স মোডে যেত না বরং এরপর তামাম জাহান স্বেচ্ছায় ইসলামী রাজনীতির ছায়াতলে আসত এর বস্তুগত উপযোগিতার কারণেই! সে জন্য ইসলামী ব্যবস্থা কায়েমের কারণ হিসাবে ধর্মে আল্লাহ-নবীর হুকুম আছে কিনা সে আলোচনায় না গিয়েও কেবল মাত্র প্রয়োজন, উপযোগিতা এবং উপযুক্ততার কারণেই রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে ইসলামের ব্যবস্থা (কিন্তু ইসলামী ব্যবস্থা নয়) সমাজ-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হত।

ব্যাংকিং বিবর্তনে আপদের আবর্তন!

অনলাইন ব্যাংকিং শৈশব পার করে যৌবনে পদার্পণ করেছে। প্রাথমিক বিস্ময় থেকে পরিকল্পিত বিকাশ আরম্ভ হয়েছে, ব্যাংকগুলি ক্রমান্বয়ে “পেপারলেস” ব্যাংকিং এর দিকে ধাবিত হচ্ছে। একই সাথে ব্যাংক গুলো সম্ভবত সূচনা লগ্ন থেকে আজতক এত বড় ও ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সামনাসামনি আর কখনো হয়নি। একদিকে প্রযুক্তি গত বিস্ফোরণ, অন্য দিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা যার সূত্রপাত ব্যাংকের হাত ধরেই। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের হাত ধরে নতুন আরেক অদৃশ্য কিন্তু মহা পরাক্রমশালী যন্ত্রণার নাম “মানি লন্ডারিং”, যার পার্শ্ব প্রতিক্রয়া হিসাবে গ্রাহকের প্রতি নিয়ম কানুনের ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রশিক্ষন ও জরিমানার বোঝা বাড়ছে, ব্যাংক-গ্রাহক পারস্পারিক আস্থা কমেছে। আবার পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গ্রাহকের প্রয়োজন ও চাহিদাও সদা পরিবর্তনশীল। ফলে ব্যাংকের প্রথাগত ভূমিকা ও অবয়বের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী সময়ের প্রয়োজনেই। অস্তিত্বের প্রয়োজনেই ব্যাংককে পরিবর্তনের সুবিধা নিতে হবে। এই পরিবর্তনের ধারায় ব্যাংকগুলিকে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তা হল জালিয়াতি প্রতিরোধ। বিশেষ করে অনলাইন ব্যাংকিং এর বিকাশের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে পরিচয় জালিয়াতি বা “আইডেনটিটি ফ্রড”। বর্তমানে সব ব্যাংকই তাদের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যাবস্থার মাধ্যমে জালিয়াতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু যত বেশী সুরক্ষা ব্যাবস্থা তত বেশী গ্রাহক ভোগান্তি ও গ্রাহক বাড়তি সেবার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি। তাই সব সময়ই ব্যাংক গুলিকে গ্রাহক তুষ্টি ও নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। আর জালিয়াতি জনিত ক্ষতি সমন্বয়ের ফলে আখেরে যেমন ব্যাংকের সেবা প্রদানের ব্যায় বাড়ে তেমনি জালিয়াতির বিররুদ্ধে প্রতিরোধ প্রোগ্রামও ব্যাংকের সামগ্রিক খরচ বৃদ্ধি করে। সব দেশ বা সব ব্যাংক বা সব গ্রাহকই সমান ঝুঁকিতে নাই তবে কেউই ঝুঁকির বাইরেও নয়। বাংলাদেশে এখনও তেমন উল্লেখ যোগ্য অনলাইন ব্যাংকিং জালিয়াতি হয়নি। তার মানে এই নয় যে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা খুবই শক্তিশালী, এর কারণ এখনও কোন বড় আক্রমনের ঘটনা ঘটেনি, যে কোন সময় তা হতে পারে। এখনো জালিয়াতদের নজর বাংলাদেশের উপর খুব একটা পড়েনি। সংঘবদ্ধ জালিয়াতদের কাছে এখনো বাংলাদেশের চেয়ে লোভনীয় অনেক সুযোগ আছে। তবে বন্ধু-বান্ধব-আত্নীয়-পরিজন-সহকর্মী বা দুর্জন প্রযুক্তি বিদ্বানের খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা সবসময়ই আছে। আর সহজ শিকার হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি জালিয়াত চিলদের কুনজর পড়তেই বা কতক্ষন! অনলাইন ব্যাংকিং যেমন বৈশ্বিক তেমনি এর ঝুঁকিও বৈশ্বিক।
অনলাইন ব্যাংকিং এর শুরু থেকেই জালিয়াতি শুরু হয়নি, ২০০০ সালের শুরু থেকে এই সমস্যা এত প্রকোপ হয় যে ব্যাংক গুলোকে তা নতুন করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। বেশীরভাগ অনলাইন জালিয়াতি দুই ধাপে বিভক্ত। প্রথমত গ্রাহকের হিসাবে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন, আইডি, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি সংগ্রহ। দ্বিতীয়ত সংগৃহীত তথ্য ব্যাবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের হিসাবের অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর। এদের প্রতিরোধ করা যায় প্রথমত তথ্য চুরি পর্যায়ে, পরবর্তীতে অবৈধ ভাবে লেন-দেন করার সময়ে। তবে প্রথম পর্যায়ে তা প্রতিরোধ করা অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী যাতে মুখ্য ভূমিকা থাকে গ্রাহকের আর লেন-দেন পর্যায়ে প্রতিরোধের দায়িত্ব নিতে হয় ব্যাংকের যা সম্পূর্ন রূপে প্রায়ই অসম্ভব, কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল। বিভিন্ন গোষ্ঠীর জালিয়াতদের জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োজন। বন্ধু রূপী বা পরিবারের আভ্যন্তরীণ ও প্রলুব্ধ সুযোগ সন্ধানীদের কেবলমাত্র গ্রাহক পর্যায়ে সাধারণ সতর্কতার মাধ্যমেই প্রতিরোধ করা যায়, কারণ তারা তথ্য পায় খোদ গ্রাহকের নিকট হতে। আর আভ্যন্তরীণ জালিয়াতদের বা বেড়ায় ক্ষেত খাওয়া প্রতিরোধের জন্য দরকার চলমান ও বিবর্তনীল প্রতিরোধ ব্যাবস্থা। কিন্তু' দুর্দমনীয় হচ্ছে দুর্জন প্রযুক্তি বিদ্বান ও সংগঠিত জালিয়াত চক্র। তবে ব্যাংক-গ্রাহকের যৌথ ও সমন্বিত ভূমিকায় এই হুমকি সহজেই মোকাবেলা করা বা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব, কারণ তথ্য চুরি ঠেকানো গেলে জালিয়াতির সুযোগও কমে আসবে ।
প্রথম ধাপে এই তথ্য সংগ্রহের জন্য জালিয়াতরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পন্থা উদ্ভাবন করেছে। এরা এতটাই সৃষ্টিশীল যে ব্যাংকগুলি যখন যে পন্থাই অবলম্বন করেছে তারা তা ভাঙ্গার পন্থাও বের করেছে। মূলত যারা সাইবার ক্রাইমের সাথে জড়িত তারা এই গ্রহের সবচেয়ে মেধাবীদের অন্যতম। যার ফলে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ব্যাংক গুলি এখন পর্যন্ত প্রায় পুরোটাই ব্যর্থ, কিছুটা সাফল্য আছে সংগঠিত অপরাধ উদঘাটনে। যদিও ব্যাংকগুলি তাদের নিরাপত্তা বাড়াতে সম্ভাব্য সব কৌশলই অবলম্বন করেছে কিন্তু প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে অপরাধীদের দ্বারা অপরাধ সংগঠনের পর। এর ফলে একই ধরনের অপরাধের হার কিছুটা কমলেও অপরাধের মাত্রা কখনোই কমেনি বরং দিনকে দিন তা আরও বহুমাত্রিক হয়েছে। অস্থির সময়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল চাহিদার বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অসমন্বিত বিকাশে প্রযুক্তি অবকাঠামোতে মানানসই কোন ”আদর্শ” গড়ে না ওঠায় এবং নানাবিধ প্রযুক্তির অপরিমেয় ও অপরিমিত ব্যাবহারিক প্রয়োগের সম্ভাব্যতার প্রেক্ষিতে নিরাপত্ত্বা বজায় রাখা আরও জটিল হয়ে উঠছে। আর মোবাইল প্রযুক্তির অভূত পূর্ব উৎকর্ষতায় হঠাৎ আগত এই পরিস্থি'তি ব্যাংকের চিরায়ত ভূমিকা, কর্তৃত্ব ও অবয়বকে যুগ সন্ধি ক্ষনে উপনীত করেছে। পাশাপাশি যে মুদ্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকের জন্ম ও বিকাশ তার চরিত্র ও চেহারা আমূল পাল্টে গেছে। জন্ম লগ্নে আদিকালের মূল্যবান বস্তু' বা রত্ন-পাথর বা ধাতব মুদ্রার ব্যাবহারিক মূল্য ও মূল্যমান দুটোই থাকলেও কালক্রমে আধুনিক মুদ্রা ব্যবস্থায় কাল্পনিক মূল্য আরোপিত ব্যবহারিক মূল্যহীন কাগুজে (তা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড বা ফিয়াট যাই হউক) মুদ্রার প্রচলন। অনলাইন ব্যাংকিং এর বিকাশ মুদ্রাকে কেবল মাত্র ইলেকট্রনিক কোডে নির্মিত বিমূর্ত ধারণায় পরিণত করেছে যা কারও ক্রয় ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট ”সংখ্যা” মাত্র। বর্তমান ব্যাবস্থায় সারা জীবনে একটি মুদ্রাও স্পর্শ না করে মুদ্রার সমস্ত প্রয়োজন মিটানো বা মালিকানা বজায় রাখা সম্ভব!! তাই মুর্ত মুদ্রার ধারক হিসাবে যে ব্যাংক ব্যাবস্থার ক্রমবিকাশ বিমূর্ত মুদ্রার আগমনে আজকে আমরা ব্যাংক শাখা বলতে যা বুঝি ভবিষ্যতে তার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে, কিম্বা দেখা যেতে পারে সম্পূর্ন ভিন্ন চেহারায় ভিন্ন দক্ষতায় এবং ভিন্ন প্রয়োজনে। এই পরিবর্তন মুদ্রা ব্যাবস্থার পরিচালন অবকাঠামো হিসাবে ব্যাংক ব্যাবস্থার প্রয়োজন ও ভূমিকাকে নতুন ভাবে নিরূপণ করবে আগামীর অদৃশ্য মুদ্রা। ইতোমধ্যেই প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুদ্রা তার ভৌগলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার চেয়ে আধুনিক ব্যাংক ব্যাবস্থার নিরাপত্তা আরও বেশী জটিল ও কঠিন হয়ে উঠবে কারণ আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থায় ব্যাংকের কোন নিরাপত্তা সীমা থাকবে না। ব্যাংক স্থানীয় হলেও ঝুঁকি সব সময়ই আন্তর্জাতিক। তাই আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অবকাঠামো উন্নত বিশ্বের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও মোকাবেলা করতে হবে উন্নত বিশ্বের মত একই ঝুঁকি। এক সময় কেবল মাত্র গোপন পাসওয়ার্ড লেন দেনের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট হলেও বর্তমানে কেবল পাসওয়ার্ড নির্ভর সুরক্ষা দুর্বলতম সুরক্ষা যা যত ক্ষন আক্রান্ত না হয় তত ক্ষন সুরক্ষিত। কারণ পাসওয়ার্ড যত দুর্বোধ্য বা পেটা ডিজিটের হোক জালিয়াতরা তা চুরি করতে সক্ষম। কারণ রেলগাড়ির গতিতে ব্যাংক জালিয়াতি প্রতিরোধ সক্ষতা অর্জন করে আর জালিয়াতরা সুপারসনিক গতিতে তাদের কৌশল বদলায় কারণ সাইবার ক্রাইমে যারা জড়িত তারা এই গ্রহের অন্যতম সরা কিছু বুদ্ধিমান প্রাণী! বর্তমানে ব্যাংক যে কৌশলই অবলম্বন করুক তা দুদিন আগে পরে জালিয়াতরা তা ভাঙ্গতে সক্ষম। এখন তারা এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছে যে কোন একক পদ্ধতিতে এর প্রতিকার সম্ভব নয়। তাই ব্যাংকগুলি মাল্টি চ্যানেল/লেয়ার পাসওয়ার্ড ও বায়োমেট্রিক আইডি অথেনটিকেশনসহ নানা উপায় নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছে।
এই বাস্তবতায় প্রযুক্তি একই সাথে ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং দুর্বলতা। আর আমাদের মত অ/অর্ধ শিক্ষিত বা সার্টিফিকেট নিরূপিত এবং পরিসংখ্যানে প্রমাণিত শিক্ষিত জাতির জন্য গোদের উপর বিষের ফোঁড়া প্রযুক্তি বিমুখ এবং অদক্ষ ব্যবহারকারী গ্রাহক। কারণ বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংক ব্যাবস্থায় এর নিরাপত্তা হুমকি যেমন বহুমুখী তেমনি এর প্রতিরোধেও দরকার বহুমুখী ও সমন্বিত উদ্যোগ। কেবল ব্যাংক বা সরকার কারও পক্ষেই একক ভাবে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়, যদিনা এর ব্যবহারকারী গ্রাহক প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং এর জন্য যথাযথ জ্ঞান, দক্ষতা, সক্ষমতা ও সচেতনতা বোধ অর্জন করে।

ঋণের জাল!

ঋণ বা অনুদান বা সাহায্য কোনটাই দারিদ্রের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর অস্ত্র নয় যা ইতোমধ্যে বহুল প্রমানিত ও স্বতসিদ্ধ প্রপঞ্চ! এগুলি আসলে পুঁজিবাদের স্টান্ট যাতে মানুষকে সাময়িক ভাবে ধোকা দিয়ে অধিকার বোধহীন করে, তাদের বিমোহিত করে অন্য দিকে বড় ফায়দা লুটে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর অস্ত্র হল এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্থায়ী সক্ষমতা গড়ে তোলা। অনেকেই বলে থাকেন ক্লিন্টন পরিবারের সাথে বন্ধুত্বের কারনে ড. ইউনুস ও মাইক্রো ক্রেডিটকে আমেরিকাসহ পশ্চিমারা প্রমোট করেছে যদিও মাইক্রো ক্রেডিটের ফলাফল নিয়ে তারা আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন যে এর দ্বারা দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠানো যাবে না। কিন্তু কর্পোরেট আমেরিকার (বিশ্ব ব্যাংক) বিশ্বব্যাপী বেসরকারী করনের প্রভাব জন জীবনে এতটাই নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করত যে জন বিক্ষোবের মূখে এই প্রক্রিয়া চালানো প্রায় অসম্ভব ছিল। কারন বেসরকারী করনের ফলে অনেক সেবা যা আগে ফ্রী পায়া যেত তা এখন বাজার মূল্যে কিনে নিতে হচ্ছিল। মাইক্রো ক্রেডিটের কল্যানে মানুষের হাতে কিছু বাড়তি অর্থ যাওয়ায় তা উৎপাদনমূখী কাজে বিনিয়োগের বদলে বাড়তি জীবন যাত্রার ব্যায় মেটাতে অধিকাংশই খরচ হয়ে গেছে। দরিদ্ররা দরিদ্রই আছে কেবল মাথার উপর জমেছে ক্রমপুঞ্জিভূত ঋণ। মাইক্রো ক্রেডিটের ফল যাই হোক বিশ্ব ব্যাংক ১০০ ভাগ সফল তাদের সর্বগ্রাসী বাণিজ্যের থাবা বিস্তারে। আমার ধারনা ইউনুস সাহেব হিলারীকে নিয়ে পালিয়ে আসলেও ক্লিন্টন তার সহযোগীতা অব্যাহত রাখত অন্যথায় মাইক্রো ক্রেডিট চালু না থাকলে SAP & ESAP প্রায় অসম্ভব ছিল। বিশ্বকে বেনিয়াদের হাতে তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে ইউনুস সাহেব অজ্ঞাতে যে পাপ করেছেন তিনি তার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবেই হয়ত এখন 'সামাজিক ব্যাবসা'র পথে নেমেছেন!
NO Credit, NO Donation!
Healthy Families, Wealthy Nation!!
#Familipreneurship

দরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল!

দৃশ্যত সরকারি নীতিমালা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণোদনা ও 'সেবার' ব্রত নিয়ে দেশের সবগুলো তপশীলি ব্যাংক এসএমই খাতে ঋণ দিয়ে থাকে আর সঙ্গত কারণেই এই খাতে ঋণের সূদের হার বেশি। গড়ে বাৎসরিক প্রায় পঁচিশ ভাগ এর উপর সূদ ও অন্যান্য খরচ, এর অন্যতম কারণ এই ঋণের বিপরীতে 'যোগ্য' জামানত না থাকায় একদিকে অনিয়মিত ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি অন্য দিকে সেই ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য প্রভিশন ব্যায় বৃদ্ধি, এই দ্বিমূখী কারণে ব্যাংক গুলির পক্ষে এর চেয়ে কম খরচে সেবা দেয়া আসলে সম্ভব নয়। আবার এই খরচে তহবিল সংগ্রহ করে কারবার টিকিয়ে রাখাও মুশকিল, তাই ব্যাংক গুলি কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠিত ও লাভজনক এসএমইতেই বিনিয়োগে আগ্রহী আর পুঁজির সুরক্ষার্থে সেটাই স্বাভাবিক। তাই সম্ভবত বাংলাদেশের কোন ব্যাংকই (সরকারি ছাড়া) নতুন এসএমই স্থাপনে ঋণ দেয় না আর সরকারী ব্যাংক গুলিতো আর সাধারণ জনগণের নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি নতুন এসএমই স্থাপন সব সময়ই ঝুঁকি পূর্ণ ও এর সাফল্য ব্যাক্তি কেন্দ্রীক, এর কোন প্রমিথ ও নৈর্বাক্তিক মাপ কাঠি নাই যা দিয়ে এর ভবিষ্যত Calculate করা যাবে, বড় জোর Speculate করা যায় । কিন্তু নীতিগত ভাবে বাংক Calculative, Speculative নয় কারণ ব্যাংকের অর্থ জনগণের, কোন ঝুঁকি পূর্ণ খাতেই ব্যাংকের বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়। এসএমইতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক যেমন উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নয় তেমনি এসএমই এর জন্যও এটা লাভজনক তহবিলের উৎস নয়। তারপরেও এই ব্যাবস্থা বহাল থাকায় উচ্চ সূদ ব্যায় জনীত কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব ফেলে। নতুন এসএমই তৈরিতে অর্থায়নের জন্য দরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল যা ছাড়া আসলে এন্টারপ্রেনর সৃষ্টি অসম্ভব। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকই এন্টারপ্রেনরদের ঋণ দেয় না, ঋণ দেয় প্রতিষ্ঠিত ও সচ্ছল ব্যবসায়ীদের!

বাংলাদেশের অনলাইন ব্যাংকিং!

অনলাইন ব্যাংকিং আমাদের প্রথাগত অনেক জটিল 'ব্যাংকিং' কাজকে সাধারণ মামুলি কাজে পরিণত করেছে, বিশেষ করে অর্থ স্থানান্তর। বাণিজ্যিক লেনদেনকে দ্রুত, সহজ ও সস্তা করেছে যা ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। অর্থের কারবারে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মনোপলি অনেক আগেই চলে গেছে, মানি সার্ভিসসহ অনেক লেনদেনই এখন অব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যেমন পেপাল, গুগল ওয়ালেটসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাচ্ছে। যদিও বিশ্ব চলে ইকমার্সে, এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে অনলাইন ব্যাংকিং মূলত অর্থ স্থানান্তরেই সীমাবদ্ধ, যদিও অনলাইন বিল কালেকশন অনেকটাই প্রচলিত কিন্তু অনলাইন কেনাকাটা বা লেনদেন এখনও 'ফর ডিসপ্লে অনলি'। আমাদের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার মোট ব্যায়ের অনেক খানিই এই ব্যাবস্থায় জড়িত অর্থের লেনদেন ও মুদ্রা বিনিময় জনিত ব্যায়ের কারণে। অনলাইন ব্যাংকিং এর সুপরিকল্পিত ব্যবহার এবং আর্থিক লেনদেন এর 'অটোমেশন' বা ইলেকট্রনিক মানির সার্বজনীন ব্যবহার একদিকে যেমন মুদ্রা ব্যবস্থাপনা জনিত ব্যায় কমাবে তেমনি সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে যা আখেরে উৎপাদন ব্যায় হ্রাস করবে।
বাংলাদেশের অনলাইন ব্যাংকিংএবং লেনদেন ব্যাবস্থা ততক্ষন পর্যন্ত 100% নিরাপদ যতক্ষন না আক্রান্ত হচ্ছে, আক্রমন হলেই এর নিরাপত্ত্বা 000%, এইটা কোন ফ্যাক্টর নয় আমরা কয় ফ্যাক্টর নিরাপত্ত্বা ব্যাবস্থা ব্যাবহার করছি! অনলাইন ব্যাংকিং বা লেনদেনের সুবিধা বহুবিধ কিন্তু সবচেয়ে বড় অসুবিধা এবং হুমকি এর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা যার ডাক নাম হ্যাকিং আর ভাল নাম সাইবার ক্রাইম! আর এই হ্যাকিং কখনই শতভাগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর কারণ এটাই বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে লাভ জনক পেশা হওয়ায় এই পেশায় এই গ্রহের অন্যতম সেরা মেধাবী প্রাণীরা জড়িত। অনলাইন ঝুঁকি জানার জন্য আমাদের ঐ হ্যাকারদের জন্যেই অপেক্ষা করতে হয়, কারণ ঝুঁকিটি তখনই জানা যায় যখন কেউ আক্রান্ত হয়। তাই সাইবার অপরাধ আক্ষরিক অর্থেই বন্ধ করা সম্ভব নয়, কেবল মাত্র আক্রান্তের সংখ্যা সীমিত রাখা এমনকি তা এক এ নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে সে জন্য দরকার এর সাথে সংশ্লিষ্ট সেবা দাতা, গ্রহীতা, প্রযুক্তি সহায়তাকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সমন্বিত ও সমমানের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সামগ্রিক সাইবার নিরাপত্তার মান নির্ভর করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহের দূর্বলতম মানের উপর। যা অনলাইন তা অবশ্যই আন্তর্জাতিকও বটে, তাই বহমান নদীর যেমন একটা নির্দিষ্ট অংশের পানি পরিস্কার রাখা সম্ভব নয় তেমনি একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোন ক্রমেই শতভাগ নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে আমার ব্যক্তিগত অনুমান সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলার মান নির্ভর করে 25% সেবা দাতা যেমন ব্যাংকি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, 25% ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও 50% ব্যবহারকারীর উপর। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের অনলাইন সেবাদাতা ও প্রযুক্তি যদি তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় কার্যকর থাকে তাহলে আমাদের অনলাইন/ইব্যাংকিং ব্যাবস্থা গাণিতিক ভাবে 50% আর বাস্তবে 00% নিরাপদ! কারণ হ্যাকারদর সবচেয়ে সহজ প্রবেশদ্বার ব্যাবহারকারীর যন্ত্র, আর সেই যন্ত্রে যদি পাইরেটেড সফটওয়ার থাকে তবে তাকে তুলনা করা যেতে পারে সেই গোডাউনের সাথে যার ভিতরে আছে মূল্যবান সম্পদ, লৌহকপাটে বিশাল তালা কিন্তু একদিকে দেয়ালই নাই! তার উপর অনেকের দরজা আছে তো তালা নাই, কারও আবার দরজাটাও নাই। আমাদের কপাল ভাল এখনও বিদেশী অনেক গোডাউনেরই ভাল তালা নাই আবার ঐসবে আমাদের চেয়ে দামী মাল আছে তাই হ্যাকারদের চোখ এখনও সেভাবে আমাদের উপর ফেলার প্রয়োজন হয়নি।

নোনা কাব্য!

সন্দেহ নেই পৃথিবী দিনে দিনে আধুনিক থেকে আধুনিকতর ও উন্নততর হচ্ছে, নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের হুমকিতে কোন মতে টিকে আছে আমাদের এত দিনের কিংবদন্তি কল্পনার সীমানা। প্রযুক্তি বিস্ফোরণ বিশ্বের উৎপাদন কাঠামো আমূল বদলে দিয়েছে আর পুঁজিবাদ লিজ নিয়েছে আমাদের জীবন, মনন ও সংস্কৃতি। বর্তমান সময়ের পরিভাষায় উন্নতি মানে পুঁজিবাদের উন্নতি আর সব কিছুর সুফলের মালিকানা পুজিবাদের কিন্তু কুফলের দায়ে গরিবের মনপলি। পুঁজিবাদে মানুষ মানে গরিব মানুষ, উৎপাদনের ইনপুট মাত্র যার অস্তিত্ব মাপা হয় পরিসংখ্যানে। পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সফলতা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাবহৃত সবচেয়ে বেশী দরকারী এবং দামী উপাদান ‘শ্রম’ সবচেয়ে সস্তায় এবং সহজে পাবার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছে আর পুঁজিবাদের তাবেদার গণতন্ত্র মানুষকে কয়লার দামে ‘শ্রম’ নামক হিরা বেচতে বাধ্য করছে, পরিনত করেছে বন্ডেড লেবারে। মানুষের চিরচেনা অনেক কষ্টকর কাজই এখন যন্ত্রের ঘাড়ে কিন্তু যন্ত্রের দ্বারা সম্ভব নয় এবং যন্ত্রের চেয়ে কম খরচে সম্ভব এমন সব কাজ এখন মানুষের ঘাড়ে মাত্র দুটো শুকনো রুটির বিনিময়ে। প্রতিটি আলো ঝলমল সুউচ্চ ভবনের গাঁথুনিতে মিশে আছে শত শত আধা-পেটা গরিবের ঘাম, মানুষের রক্তে সাজানো হয় নাগরিক পসরা। প্রতিটি নাগরিক সুখের নীচে চাপা পরে কাল স্রোতে মিশে যায় অজস্র মানুষের বোবা কান্না, দেউলিয়া স্বপ্নেরা পিসে মরে বিকলাঙ্গ হয় বিলাসের বড় বড় চাকাতে। ধরনীর জরায়ুতে ঘামের বীজে ফলা ফসল আর দেহ কলে তৈরী প্রায় সবই চলে যায় জারজ রসনার পুজাতে আর রাতের চোখে ঘুম নামে বুভূক্ষদের গোঙ্গানী সঙ্গীতে।
গত শতাব্দীর সেরা আশির্বাদ পরিবেশ সচেতনতা আর এর অভিশাপ হিসাবে কায়িক শ্রম নির্ভর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল উৎপাদন ব্যবস্থার ভৌগোলিক ঠিকানা এখন গরীব বিশ্ব যার প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে প্রতি রাতে আমার ঘড়ের পাশে লেখা হয় অসংখ্য অচেনা সেলাই দিদি মণিদের অজানা নোনা কাব্য।


You may like:

মোবাইল ব্যাংকিং নাকি গিনিপিগ ব্যাংকিং......!!!

বিল গেটস মোবাইল ব্যাংকিং প্রসঙ্গে বলেন, "Bangladesh is adopting WILD technology"!
সাম্প্রতিক বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং বুম তামাম বিশ্বেই বেশ গুরুত্বের সাথে আলোচিত এর বাজার মূল্যের কারণে , তাই এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে কর্তারা বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। সাময়িক এই সাফল্যের পুরস্কার আসলে আমাদের নজর অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য । সত্যিকার অর্থে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনার উপযোগী আইনী অবকাঠামো গোটা বিশ্বেই এখন স্থীর হয়নি, তার উপর এর প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এখনো পরীক্ষাধীন। বিশ্বের বেশীরভাগ দেশই খুব সতর্কতার সাথে আস্তে আস্তে এগুচ্ছে যাতে কোন সিস্টেম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে না হয়, আর হলেও যেন মোকাবেলা করা যায়। আর আমরা ছুটছি চোখ বাঁধা ষাঁড়ের মত, পিছু ফেরার উপায় নাই। অথচ কোন সিস্টেম বিপর্যয় ঘটলে তা মোকাবেলার নূন্যতম সক্ষমতাও বাংলাদেশের নাই। ধান, টিকা বা 'পেট কাটা' ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অভাগা ভাই বোনদের গিনিপিগ বানিয়েছিল, এবার স্বাধীন বাংলাদেশ পুরাই গিনিপিগ বিশ্বকে নিরাপদ মোবাইল ব্যাংকিং উপহার দেবার জন্য, সামনে হয়তো আরও বেশ কিছু পুরস্কার এমনকি নোবেলও আসতে পারে! এটা যে কত বড় বাণিজ্য বাজার তা এই মুহূর্তে অকল্পনীয়।
বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিল গেটস বলেন, "Bangladesh is adopting WILD technology"! কথাটা আবার ফলাও করে প্রচার করাও হচ্ছে।
বিল গেটস এটা প্রশংসা করেছেন নাকি আশংকা প্রকাশ করেছেন সেটা নিশ্চিত না হলেও একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে আমাদের বর্তমান মোবাইল ব্যাংকিং অবকাঠামোর সিস্টেম সিকিউরিটি হিসাবে 'মোনাজাত' ছাড়া বাজারে আর কোন এন্টিভাইরাস বা কিট নাই!

You may like:

গরু মেরে জুতা দান!

মোবাইল অপারেটরদের দান খয়রাতী এখন সর্বজন বিদিত এবং বহুজন প্রত্যাশিত। বর্তমানে দেশে এগার কোটি আশি লাখের উপরে মোবাইল কানেকশন আছে (বিটিআরসি, জানুয়ারী/২০১৪) যাদের বেশীর ভাগ চালু আছে, কিছু সাময়িক ভাবে, কিছু চিরতরে বন্ধ আছে। আমরা প্রত্যেক দিন নানা ভাবে মোবাইলে অতিরিক্ত খরচ গুনতে বাধ্য হই। দুর্বল নেটওয়ার্কে কথা না হলেও বিল, পাল্স নামক চৌর্যাস্ত্র/সিঁদকাঠি, নানা জটিল প্যাকেজের কুটিল ধুম্রজাল, ধোঁকাবাজি এসএমএস ও ভ্যালু এডেড সেবার ফিসিং/খপ্পড় তো আছেই, সেই সাথে গ্রাহকের ইউসেজ পরিমাপের সঠিকতা যাচাই এর অক্ষমতা কোম্পানিগুলোকে কেবল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারেরই সূযোগ দেয়নি, দিয়েছে শয়তানের স্বাধিনতাও। যদি ঘোষিত সংখ্যার অর্ধেক মোবাইলও চালু থাকে আর নানা ফাঁদে দৈনিক গড়ে দশ টাকা ঠকে তাহলে প্রতি মাসে ঠকে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশী! অনেক দিন বন্ধ থাকা সিমের টাকা এমনি এমনি গায়েব হওয়া ছাড়াও চিরতরে বন্ধ সিমের টাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হলেও এর সমষ্টি অকল্পনীয়ও রকমের বড়। আমরা ভোক্তা স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়ে চিল্লা পাল্লা কম করিনা, কিন্তু দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভোক্তা ঠকানোর এই মহা অঘটনটি দিনের পর দিন চলে আসছে সবার নাকের ডগায় অথচ অবিশ্বাস্য ভাবে তা এখনো সম্পূর্ণ লোক চক্ষুর আড়ালেই পরে আছে! একবার ভেবে দেখেছেন এ পর্যন্ত আপনি কত ঠকেছেন?!
পৃথিবীর কোন দেশেই অদাবীকৃত বা পরিত্যাক্ত সম্পদ কোন বাক্তি বা প্রতিস্ঠান দখল/ভোগ করতে পারেনা। যেমন কোন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে যদি গ্রাহকের অর্থ-সম্পদ একটা নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অদাবীকৃত থাকে তাহলে তা কেন্দ্রীয় বাংকে পাঠাতে হয়। কিন্তু মোবাইল এর অদাবীকৃত ও পরিত্যাক্ত ব্যালান্স কোম্পানিগুলো একেবারে নিজের বগলদাবা করেছে কোন বাধা ছাড়াই। জনস্বার্থে সরকারের উচিৎ অবিলম্বে এ বিষয়ে আইন করা এবং এযাবৎ হজমকৃত টাকা কোম্পানিগুলোর কাছে থেকে সূদাসলে আদায় করে জনস্বার্থে ব্যায় করা, কারণ এই অর্থের প্রকৃত মালিক জনগন।

You may like:

মাইক্রোক্রেডিটের বন্যা, অত:পর সুনামি (!?)

মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। কিন্তু সমালোচনা বেশীরভাগই ভাবাবেগ ও পক্ষ নিভর নির্ভর । অনেক বিশেষজ্ঞই অনেকভাবে অনেক মাত্রায় এর সমালোচনা করেছেন। তবে বেশীরভাগ আলোচনাতেই মাইক্রোক্রেডিট, গ্রামীন ব্যাংক এবং ড. ইউনুস এর সীমানা ও দায় অনির্ধারিত বা অস্পষ্ট। সাধারণ্যে এর সবচেয়ে বড় দোষ উচ্চ সুদের হার। কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কোন সমালোচনাতেই বলা হয়না এটা নিষিদ্ধ করা হোক। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমালোচনার নামে যা হয়েছে তা হচ্ছে গীবত; কারন সমালোচনা হলে এই খাতের দূর্বলতা কাটিয়ে দিনে দিনে তার উন্নতি হত। কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে এর আগমন হলেও এর কাঠামোগত, পদ্ধতিগত বা ব্যবহারিক উৎকর্ষ সাধিত হয়নি, সেবা প্রদানের ব্যয় কমানোর কোন উদ্যোগ দেখা যায়না বরঞ্চ দিনে দিনে তা টাকা তৈরীর সহজ ও সস্তা কিন্তু ভীষন লাভজনক যন্ত্র হিসাবে বিকষিত হয়েছে। বাঙ্গালীমধা একে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়! হাটে-মাঠে-ঘাটে-সারাতল্লাটে চালু হয়েছে নানা নামে ঢঙ্গে এনজিও নামক ব্যাঙ এর ছাতার নীচে মাইক্রোক্রেডিট সেবা!!
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই খাত এখন সবচেয়ে বেশী অনিয়ণিত্রত মহীরূহ। হাজার হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট এই খাতে । বাংলাদেশে এই মহূীর্তে ঠিক কতগুলি মাইক্রোক্রেডিট দাতা প্রতিষ্ঠান আছে এর হিসাব সয়ং বিধাতা ছাড়া আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সুতরাং সেবা গ্রহীতাদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে চাওয়াই অপরাধ! তারপর আবার আছে Overlapping। তবে এটা ধরে নেওয়া যায় নিদেন পক্ষে কোটি দুয়েক মাইক্রোক্রেডিট গ্রহীতা বাংলাদেশে আছে। তবে এই খাতে কত টাকা বিনিয়োগ করা আছে, বিনিয়োগকৃত টাকার কত অংশ উদ্যোক্তাদের (এনজিও মালিকদের ?!!) আর কত অংশ ঐ “Poorest of the poor” দের সঞ্চিত তাও অস্পষ্ট। এই প্রেক্ষিতে সহীহ্ তথ্যের তালাস করা কয়লার খনিতে কালো বেড়াল খোজার মতোই! এই সেক্টরে যদি কোন কারনে বর্তমান স্বনিয়ন্ত্রিত ও প্রচলিত (বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আসলে অনিয়ন্ত্রিত) ব্যবস্থা ভেংগে পড়ে তাহলে আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিতে যে সুনামী বয়ে যাবে তা নিয়ন্ত্রন বা মোকাবেলার সামর্থ সরকারের নাই। কারন আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের অসংখ্য মানুষের বহু কষ্টের সঞ্চিত লক্ষ কোটি টাকা জড়িয়ে গেছে “মাসে লাখের উপর” লাভের লোভের ও ফাঁদে পরে। এছাড়াও রয়েছে বাধ্যতামুলক সষ্ণয় নামে ঋণগ্রহিতাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের বিশাল পাহাড়। কোন ঝামেলা হলে পালাবে মালিক, তার লাভ সে আগেই তুলে নিয়েছে। আখেরে লোকসান সেই আমজনতার। আর দেশবাসীর জন্য এটা হবে মহাসুনামী। কারণ দিনের শেষে সবকিছুর মূল্য পরিশোধ করতে হয় এই দেশের আপামর জনতার। তবে সব বিশৃংখলাতেই সূবিধাভোগী সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হবেনা।
যে কোন ক্রেডিট কেবলমাত্র তখনই দরকারী ও উপকারী যখন তা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, না হলে তা হবে আত্নবিনাসী, ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয়ের জন্যই। বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতের কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও সচেতন অবহেলার কারণে এই আত্নঘাতি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতনভাবে প্রায় সকল ক্রেডটদাতারাই ক্রেডিটের কাযকর ব্যবহারের দিকটি উপেক্ষা করে কেবলমাত্র কিস্তি আদায়ের দিকে মনযোগী, অথচ প্রায় সকল সংস্থারই কাগজে-কলমে ক্রেডিটের কাযকর ব্যবহার ক্রেডিট প্রদানের অন্যতম প্রধান শত । বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতে কাগজে কলমে যে পরিমান নিয়োগ আছে বাস্তবে তার বিপরীতে সম্পদ অনেক কম সৃষ্টি হয়েছে। বরঙ মাইক্রোক্রেডিট সামাজিক ও মানব সম্পদের উপড় ফাইনান্স ক্যাপিটালের আধিপত্য নিরঙ্কুশ করণে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে। গৃহীত ঋণের অধিকাংশই অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যায় হয়ে এই খাতকে অন্ত:স্বার শূন্য করে ফেলেছে। তাই ব্যবস্থা ভেংগে পড়তে বাধ্য, দু’ দিন আগে বা পরে, কেবল সময়ের ব্যাপার।
এই পরিস্থিতিতে আমার কিছু সরল পর্যবেক্ষণ:
  • মাইক্রোক্রেডিট হিসাবে গৃহীত অর্থের বেশীরভাগই উৎপাদনের বদলে ভোগে ব্যয় হয়েছে।
  • অসংখ্য ঋণ গ্রহীতা পরিবারের বেশীরভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যদের নামেই নানা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া আছে।
  • বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন ঋণ গ্রহণের কারণ পুরাতন ঋণের কিস্তি পরিশোধ। ফলে প্রায় সবাই বিস্তারমান ঋণের জালে আবদ্ধ।
  • এক পর্যায়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য ধার-দেনা বাড়ির মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি/বন্ধক এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করে অতিরিক্ত আয়ের জন্য সবার গলদ ঘর্ম যার ফলাফল কিঞ্চিত অতিরিক্ত দেশজ উৎপাদন ( আহারে সাধের জিডিপি বৃদ্ধি!), পরিনত হয়েছে বন্ডেড লেবারে।
  • এরপর যখন আর কোন উপায় থাকে না তখন পুরুষরা কিস্তিওয়ালাদের ( নব্য কাবুলিওয়লা নাকি ?!) হাত থেকে বাচার জন্য শহরে পলায়ন জীবন ধারণের জন্য ‘অন্য’ কাজের খোঁজে । ফলে শহরে ভাসমান লোক জনের সংখ্যা দ্রুতলয়ে ক্রমবর্ধমান।
  • যে হারে ঋণ বেড়েছে সেই হারে সম্পদ বাড়েনি, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঋণ গ্রহণের ফলে সাময়িক ভোগ বাড়লেও নীট সম্পদ হ্রাস পেয়েছে,কিন্তু জীবন যাত্রার ব্যয় অভ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • আর বেশির ভাগ ঋণ গ্রহীতা হত দরিদ্র নারী হওয়ায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সামাজিক বিপর্যয় অত্যাসন্ন তা হল গ্রামে/ মফশ্বল শহরে এখন মৌসুমি/ভাসমান পতিতার সংখ্যা ক্রম বর্ধমান যার অন্যতম কারণ এই “কিস্তি”।
এই “Poorest of the poor” দের ভিতর যে নিরব হাহাকার চলছে তা বেশীরভাগ মানুষই শুনতে পায়না কিংবা সচেতনভাবে শুনেনা, বিশেষ করে যাদের শোনা দরকার। কারণ এদের আবার অনেকেরই রুটি-রুজি নির্ভর করে এই “Poorest of the poor” দের নিয়ে “Poverty trade” করে। অথচ “কিস্তি” এর আতঙ্কে অনেকের পারিবারিক কাঠমো ভেংগে পড়ার উপক্রম, বেড়ে যাচ্ছে পারিবারিক অস্থিরতা। আর পরিবারের অস্থিরতা সমাজে সংক্রামিত হয় গাণিতিক হারে কিন্তু সমাজের অস্থিরতা রাষ্ট্রে সংক্রামিত হয় জ্যামিতিক হারে। সম্প্রতি আমেরিকার হাউজিং বুদবুদ এবং এর ধারাবাহিকতায় বিশ্ব জুড়ে তুলকালাম কান্ড হয়ে গেল যার রেশ এখনো কাটেনি। আমেরিকার মধ্যবিত্ত সমাজকে ঋণের জাল থেকে বেড় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য বিলিয়ন ডলারের “Bail Out” প্রকল্প চলছে। ফাইনান্স ক্যাপিটালের যুগে ডলারের কল্যাণে আমেরিকার কাছে “Money absolutely doesn’t matter”. কিন্তু আমাদের দেশের হতভাগা এই লক্ষ জনগোষ্ঠীর “Bail Out program” নিয়ে কে এগিয়ে আসবে!?
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আমার আশঙ্কা বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতের শৃঙ্খলা অচিরেই একেবারেই ভেংগে পরবে। যদিও মাইক্রোফাইনান্স সেবা দাতারা (নাকি ব্যবসায়ীরা) অনেকেই দিন ধরেই নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে তাদের লোকসান ঠেকানোর জন্য বা নিজের আখের গোছানো বা মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য। ফলে ক্ষতি যা হবার তা ঐ “Poorest of the poor” দেরই একাংশের হবে। কারণ বর্তমানে বেশীরভাগ মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানের আমানত (স্বেচ্ছা ও বাধ্যতামুলক) এবং ঋণ এর অনুপাত প্রায় সমান বা অনেক ক্ষেত্রেই আমানত বেশী।
অতীত অভীজ্ঞতায় দেখা যায় যে, আমাদের দেশে কোন সমস্যা মহামারী’র আকার না ধারণ করা পর্যন্ত কর্তাদের টনক নড়ে না। কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট খাতের এই আসন্ন বিপর্যয় ঠেকাতে যত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় ততই মঙ্গল। কারণ এই মাইক্রোক্রেডিট গ্রহীতা গোষ্ঠী আমাদের জন-পিরামিডের একেবারে নিচে অবস্থিত। এই শ্রেনী ভেংগে পড়লে উপরের কোন শ্রেনীই এর বৈরী প্রভাবের বাইরে থাকতে পারবে না। এই রূঢ় পরিস্থিতি এড়াতে হলে এখনই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঋণের ট্র্যাপে আটকে পড়া এই হাজারো মানুষের Bail Out Program এর জন্য বাজেটের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে অন্তত অত্যধিক ঋণগ্রস্ত যারা নিয়ন্ত্রন বহির্ভূত কারণে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ফেরারী জীবন যাপন করছে তাদের Bail Out” এর জন্য নিদেন পক্ষে কিছু সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দরকার। “Poorest of the poor” দের নিয়ে আর “Poverty trade” নয়্, এবার দরকার “Bail Out Program for the Poorest of the poor”. এজন্য জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির জন্য একটি গণ প্লাটফরম দরকার যেখানে এ বিষয়ে যাবতীয় নীতি, পরিকল্পনা ো কর্মসূচী নির্ধারিত হবে। নইলে এখন যেমন ঋণের দায়ে আত্মহত্যার ঘটনা বিরল নয় তেমনি নিরন্ন মানুষদের দ্রোহের আগুনে সবকিছু ছাড়খার হয়ে যাবার উদাহরণ বিরল নয়, যার উত্তাপে ঝলসে যেতে পারে গোটা দেশ-জাতি।
প্রচলিত মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থার ইতিবাচক দিকসমূহ
  1. Loan repayment habit
  2. Peer feelings and social integration
  3. Participation and cooperation
  4. Neighborhood and problem sharing
  5. Risk taking ability
  6. Increased productivity of human capital
  7. Entrepreneurial quality
  8. Experience of expending money
  9. Consumerism
সম্প্রতি এই সমালোচনায় নতুন মাত্রা এসছে সরকারের প্রধানমন্ত্রী-অর্থমণ্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্য সমালোচনায়। কিছু ভূইফোর মিডিয়া এবঙ বাজারে অচল বুদ্ধিজীবির কল্যাণে সরকার ো মাইক্রোক্রেডিট এখন মূখোমূখী চাপা সাঙঘর্ষিক অবস্থায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই সরকার এখন শত কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে হাজারো নিয়ম কানুনুনের পরীক্ষা চালাবে এই খাতকে বসে আনার জন্য (ফলে পরজীবি বুদ্ধিজীবি বা তথাকথিত সুশীল সমাজের তাবেদারদের কিছুটা হলেো রুটি-রুজির ব্যবস্থা হবে!)। বাংলাদেশ ব্যাঙক ো বসে থাকবেনা নিয়ম জারির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে। এমআরসি’র মতো আরো অনেক কিছুই সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থানটি কোন পক্ষের জন্যই মংগলজনক নয়। কারণ নিয়ম প্রচলনের চেয়ে এর কার্যকারীতা নিশ্চিতকরণ বেশী গুরুত্বপূর্ন।

You may like:

বাংলাদেশের অর্থনীতির নায়ক!

বাংলাদেশের অর্থনীতির নায়ক যে দরিদ্র কৃষক কুল তাদের পুঁজির দরকার আছে কিন্তু যত দরিদ্র তাদেরকে ভাবা হয় আসলে তারা তত দরিদ্র নয়। বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রত্যেক বছর ৩ কোটি টন এর অধিক ফসল দেশকে দেয় প্রায় কোন রকম সহযোগিতা বা প্রতিদান ছাড়াই। এই বিশাল উৎপাদন ব্যবস্থায় যে মহা বিশাল পুঁজি জড়িত তার অতি ক্ষুদ্র অংশই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সরবরাহ কৃত, প্রায় পুরটাই কৃষকের প্রচেষ্টায় সংগৃহীত আর মোট পুঁজির তুলনায় প্রদত্ত ভূর্তুকীতো নস্যি মাত্র। বর্তমানে দেশের যে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ কাঠামো তা থেকে প্রকৃত কৃষকেরা প্রায় কোন সুবিধাই পায়না, যা পায় তাও সময়মত পায়না। কৃষি উৎপাদনে জড়িত কৃষকের আর্থিক প্রয়োজন কেবল চাষাবাদের মৌসুমেই নয়, বরং সারা বছরই তার বিভিন্ন পরিমাণে আর্থিক প্রয়োজন দেখা দেয়। বাস্তবতার আলোকে প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে কৃষি উৎপাদনের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ কাঠামো দরকার যা সত্যি কার অর্থেই কৃষকের জন্য উপকারী এবং লাভ জনক হবে, যা হতে পারে বাণিজ্যিক চলতিমুলধন/নগদ ঋণের আদলে গৃহস্থালী ঋণ বা অন্য কিছু।
বর্তমান ব্যবস্থায় কৃষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ব্যাংক সমূহ তার চাষাধীন জমির পরিমাণ ও ফসলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করে থাকে। শস্য ঋণ সাধারণত এক কিস্তিতে ফসল চাষের সময় বিতরণ ও উঠানর সময় আদায় করা হয়। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ফসল বপন কালে ঐ ফসলের সমুদয় উৎপাদন খরচ এককালীন ঋণ হিসাবে প্রদান করা হয়। এবং ফসল উঠানর প্রায় সাথে সাথেই ঋণের টাকা সুদ সহ আদায় করা হয়। ঋণ উত্তোলনের পর একেবারেই সব অর্থ ব্যয় হয়না, কিন্তু ঋণের সুদ গুণতে হয় ষোল আনা সারা বছর। আবার বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় হয়ে যায়। ফলে সেচ, সার-কীট নাশক ইত্যাদি কাজে ব্যয় করার জন্য হাতে সময় মত অর্থ থাকে না এবং উৎপাদন ব্যাহত হয়। অধিকাংশ সময় কৃষকেরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া সত্ত্বেও ফসল ওঠার আগ মুহূর্তে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ধার নিতে বাধ্য হয়। আবার বপনের সময় বেশী দামে বীজ কিনে ফসল উঠানর সাথে সাথে তুলনামূলক কম দামে ফসল বিক্রয় করতে হয় ঋণ পরিশোধের জন্য। ফসল ওঠা মাত্রই মহাজনরা তাদের পাওনা টাকা নিয়ে যায়, ব্যাংকের টাকা অনাদায়ী পড়ে থাকে। আংশিক টাকা ব্যাংকে জমা দিলে আবার তা ওঠান যাবেনা ফলে পরবর্তী ফসলের সময় আরও বড় সমস্যা হবে ভেবে অনেকেই হাতে কিছু টাকা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের টাকা আংশিক পরিশোধ করে না। কালক্রমে তা শ্রেনী কৃত তথা কু ঋণে পরিণত হয়। এক সময় সুদে আসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে কৃষকেরা নিজেরাও অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। প্রকৃত পক্ষে একজন কৃষককে প্রচলিত নিয়মে নিয়মিত ঋণ নেওয়া-দেয়া করতে হলে তার উৎপাদিত ফসল বেচতে হবে সংশ্লিষ্ট ফসলের জীবন চক্রে সর্ব নিম্ন দামের সময়, আর প্রয়োজনীয় ফসল বা বীজ কিনতে হবে সর্বোচ্চ দামের সময়।
বাংলাদেশের সাধারণ কৃষকদের জীবন ধারণ সময়ের সাথে সাথে চ্যালেনজিং হয়ে উঠেছে। সরল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে কৃষক নিপুণ শিল্পী তার অর্থনৈতিক জীবনেও এসেছে বহুমাত্রিকতা। বেশীর ভাগ কৃষক পরিবারের জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট ভূমি নাই। সে জন্য তাকে হতে হয় অতি হিসাবী। যেমন; ফসল উৎপাদনের বীজ সে যথাসম্ভব নিজের উৎপাদিত ফসল থেকে সংগ্রহ করে, যদি একান্তই সম্ভব না হয় তবে ঐ নির্দিষ্ট ফসল উৎপাদনের সময়ই প্রয়োজনের চেয়ে সাধ্যমত বেশী কিনে রাখার চেষ্টা করে, কারণ এ সময় উক্ত ফসলের দাম তুলনামূলক কম থাকে এবং বপনের সময় দাম বেশী থাকে। বপনের সময় অতিরিক্ত বীজ বিক্রি করে অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। আবার সুযোগ পেলে বাজারে যখন যে ফসলের দাম কম থাকে তা কিছুটা কিনে রেখে দাম বাড়লে বিক্রয় করে। অর্জিত মুনাফা তার জীবনকে সহজ করে। এভাবে খুব সাবধানে এবং ধীর গতিতে প্রায় কৃষকই শস্য কেনা-বেচার ব্যবসায় নিয়োজিত। অনেক অঞ্চলে যেটা ‘বান্দাই’ হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় সাময়িক ভাবে বিভিন্ন আয় উৎসারী কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকে। প্রায় সকল কৃষকই বহুমাত্রিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তাদের জীবনের চাকা সচল রাখে, এখন আর কেউ কেবলমাত্র কৃষক বা কৃষি শ্রমিক নয়। শস্য ঋণের টাকা আনুষ্ঠানিক ঢঙ্গে বিতরণ না করে যদি একজন কৃষকের বাৎসরিক চাহিদা এবং তার ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ঋণ সীমা নির্ধারণ করে চলতি/নগদ মূলধন ঋণের ন্যায় ঋণ হিসাব সৃষ্টি করা হয় যেখানে ঋণ গ্রহীতারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুদ পরিশোধ সাপেক্ষে প্রয়োজন মত লেন-দেন করতে পারবে তাহলে ঋণের টাকার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হবে যার ফলে সার্বিক উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে এবং ঋণ ব্যবহার জনিত ব্যয় হ্রাস পাবে কিন' ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।
এটা ঠিক যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, আভ্যন-রীন ভাবে প্রয়োজনের চেয়ে কিছু কম খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়। তবে এ ঘাটতি পুষিয়ে দেয় ঐ দরিদ্র কৃষকেরাই বছরের খানিক টা সময় (মঙ্গা,বন্যা,খরা ইত্যাদি দুর্যোগ কালে) এক বেলা/দু বেলা না খেয়ে বা কম খেয়ে। আমার বিশ্বাস পরিকল্পিতও সমন্বিত উৎপাদন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের শস্য উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে শতকরা ২০-৫০ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব অনায়াসেই। এখনো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে শস্য উৎপাদন যোগ্য সরকারী-বেসরকারি জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। আবার যেগুলিতে চাষ করা হয় তার ফসল নির্বাচনও খুব একটা যৌক্তিক ও লাভ জনক নয় যথোপযোগী তথ্য, প্রযুক্তি ও উপকরণের অভাবে। সরকারের এক ঘোষণায় এক বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়েও আভ্যন-রিন মোট উৎপাদিত খাদ্য শস্যের শতকরা প্রায় তিরিশ ভাগ বিশ্ব বাজারে রপ্তানির জন্য খাদ্য আমদানি কারক বিভিন্ন দেশে রোড শো এবং নৈশ ভোজের আয়োজন করার সুযোগ এনে দিতে পারে কর্তাদের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলিকে শস্য ঋণ প্রদানে নীতি সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে আবাদ যোগ্য প্রায় সকল ফসলের একর প্রতি উৎপাদন খরচ এবং ফসল ভিত্তিক জমির মৌসুমি ভাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ করাই থাকে, সেটাকে আরও বিজ্ঞান সম্মত করা যেতে পারে, সেই সাথে দরকার ছোট-খাট কিছু আইনি পরিবর্তন ও সমন্বয়। যেমন, কেউ তার নিজের জমি তিন মাসের বেশী ফেলে রাখতে পারবে না, রাখলে ঐ জমিতে স্বল্পতম সময়ে উৎপাদিত ফসলের জন্য মৌসুমি ভাড়ার সম পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে। তবে সে নিজে অন্য কাউকে ভাড়া দিতে অক্ষম হলে কৃষি কর্মীকে জানালেই তার দায়িত্ব শেষ। চাষীরা হয় নিজেরাই অথবা কৃষি কর্মীর মাধ্যমে (সমবায় পদ্ধতি বা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে) সহজেই জমি চাষের জন্য ভাড়া নিতে পারবে, একই জমিতে একাধিক চাষি আগ্রহী হলে নিজেদের মধ্যে লটারি করে নেবে। এছাড়া আবাদ যোগ্য সরকারী জমি একই ভাবে ফসল ভিত্তিক ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে, অধিগ্রহণ কৃত জমিতেও কাজ শুরুর আগে স্বল্পকালনি সবজি চাষ করা যেতে পারে। সরকারী লোকদের পরিবার সহ প্রায় অর্ধ কোটি সদস্যরা শুধু খায়, বেশী খায়, কখনো কম খায় না, কিন্তু খাদ্য শস্য উৎপাদনে যে মহান কৃষকের অবদান, খাবার কম পড়লে তারাই নিজেরা কম খেয়ে, কখনো না খেয়ে এই ঘাটতির সমন্বয় করে। তাই তারা এই মহা নায়কদের বিভিন্ন স্বাস্থকর ফল খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, তারা তাদের অফিস-আদালত, সরকারী আবাসন সহ যত অব্যবহৃত খালি জায়গা আছে সেগুলির কোন স্থায়ী বড় কোন ভৌত পরিবর্তন না করে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন ফলের গাছে পূর্ণ করে দিতে পারে। উৎপাদিত ফল কে পেল আর কে খেল সেটা বড় নয়, বড় কথা হল দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি তো হলো,দেশের মানুষের পুষ্টি গ্রহন বাড়ল। খুব সহজেই হতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম খরচের পানীয় খাঁটি ফলের রস, আর কেনা জানে রসের প্রতি রসনার আসক্তি?
বাংলাদেশের কৃষকেরা যে পরিমাণ ফসল উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ কায়িক শ্রম ব্যয় করেন তা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের কৃষক করেনা , বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় যন্ত্রের ব্যবহার সম্ভবত পৃথিবীতে সবচেয়ে কম বা তার কাছাকাছি। তাই নীতি গত ভাবে বাংলাদেশের কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী হওয়া উচিতৎ, কারণ বর্তমানে খুব সামান্য বিনিয়োগেই কৃষি জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল কর্তন পর্যন্ত প্রায় সব কাজই যান্ত্রিক উপায়ে করা যায়। অথচ বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা মূলত কৃষকের কায়িক শ্রম নির্ভর যা খুব সহজেই যান্ত্রিক উপায়ে প্রতিস্থাপন যোগ্য এবং তাতে ফসল উৎপাদনের প্রকৃত খরচও হ্রাস পাবে বহুলাংশে, আবার কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে অব মুক্ত শ্রম শক্তির সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সার্বিক ভাবে দেশজ উৎপাদন বাড়াবে ও মানুষের জীবন-মান এর উন্নয়ন ঘটাবে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা কোন রকমে দরিদ্র কৃষকদের বাঁচিয়ে রেখেছে প্রায় বিনা পয়সায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য। অথচ সার ও তেলে যদি কোন ভর্তুকি না দিয়েও সম পরিমাণ অর্থ কৃষি যন্ত্র-প্রযুক্তি-উপকরণ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে অচিরেই বাংলায় কৃষি বিপ্লব ঘটতে বাধ্য। কারণ সরকার যদি প্রতিটি গ্রামে সমবায়ের বা অন্য কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে কলের লাঙ্গল দিতে চায় তবে তা বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন খাতে যা বরাদ্দ থাকে তার এক তৃতীয়াংশেরও কম খরচেই সম্ভব। অথচ বৃহত্তর স্বার্থে কৃষি উৎপাদনে বিনিয়োগই সর্বাধিক লাভ জনক এবং কৃষিতে যত বেশী যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার হবে তা তত বেশী লাভ জনক হবে এবং কৃষিতে যন্ত্রায়নই কৃষি বিপ্লবের কামানের গোলা যা ছাড়া যুদ্ধ জয় অসম্ভব।
বর্তমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়, আর বাংলাদেশ ভৌগোলিক ভাবে খুবই ছোট্ট এবং প্রাকৃতিক ভাবে প্রায় সু সমতল বিরল একটি দেশ। প্রতিটি গ্রামকে উন্নয়নের একক (সমবায় বা অন্য কোন আদলে) ধরে একটি জীবন্ত নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যায় সহজেই। কারণ লাখ খানেক এককের নেটওয়ার্ক নজরদারি করা সম্ভব সার্ব ক্ষণিক ও কেন্দ্রীয় ভাবে। এজন্য নতুন বা বিশাল ব্যয়বহুল কোন প্রযুক্তির প্রয়োজন নেই আদৌ। কেবল প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।

You may like:

রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতি মানবতার আসল ভীতি!

আমাদের বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাবস্থা যে সব তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত তার অধিকাংশই ইতোমধ্যে তাত্ত্বিক ভাবে অসার বা ক্ষতিকর বা অনুপযুক্ত প্রমাণিত হলেও তা ব্যবহারিক জীবনে বহাল তবিয়তে কেবলমাত্র আমাদের মনোদৈহিক অভ্যস্ততার কারণে। আমাদের সমাজ/রাষ্ট্র/অর্থনীতির তাত্ত্বিক কাঠামো বর্তমান সময়ের সাথে একেবারেই খাপছাড়া যা আমাদের ভৌত বিজ্ঞানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। পরিহাসের বিষয় এই তিন বিষয়ই নির্ধারন করে আমাদের যাপিত জীবন!
জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে তা মানব জীবনকে সহজ ও উন্নত করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরন্তর বিকাশের প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করি নিত্য দিন, পদার্থ বিজ্ঞানের বিকাশ আমাদের আমাদের অধিকাংশ কায়িক শ্রমের দায়িত্ব নিয়েছে, ইলেকট্রনিকস এর বিকাশ আমাদের জীবন ধারার মৌলিক কাঠামো বদলে দিয়েছে, পরমাণু বিজ্ঞানের বিকাশ মানুষকে প্রায় অসীম শক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছে। সেই সাথে তদুর্ধ গতিতে বিকশিত হয়েছে আমাদের স্বজাতী ধ্বংসের অদম্য ইচ্ছা আর আত্মবিনাশী কৌশল।
পদার্থ বিজ্ঞান বা রসায়নের মত ভৌত বিজ্ঞান চর্চার সবচেয়ে বড় সুবিধা এর যে কোন তত্ত্বই বাস্তবে প্রয়োগের আগে গবেষণাগারে শতবার এর ফলাফল সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া যায়। অন্তত সূযোগ থাকে সজ্ঞানে কোন ক্ষতিকর বিজ্ঞান চর্চা না করার তারপরেও হরহামেশা তা হচ্ছে। কিন্তু সমাজ,রাষ্ট্র এবং অর্থনীতির মত বিজ্ঞান চর্চা বাস্তবে ব্যার্থ হলে তবেই তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ যোগ্য! যদিও এই তিন বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে সমস্ত ভৌত বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের মূল স্বীকার্য হল যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব পর্যবেক্ষক নিরপেক্ষ ভাবে প্রকৃতির একটা নির্দিষ্ট ঘটনার সুনিশ্চিত ভবিষ্যতবানী করবে। কিন্ত কোন বিমূর্ত পরিবর্তনশীল ধারণার ভবিষ্যত বানীর সঠিকতা বৈজ্ঞানিক ভাবে যাচাইয়ের কোন মূর্ত পদ্ধতি নাই। ফলে সমাজ/রাষ্ট্র/অর্থনীতির মত বিজ্ঞান চর্চার ফলাফল ভোগ করে তবেই জানতে হয় এর লাভ ক্ষতি! বিজ্ঞান এর অন্যান্য শাখার মত যে কোন পর্যবেক্ষক এর সঠিকতা যাচাই করতে পারে না, এর জন্য দরকার হয় 'বিশেষজ্ঞ' পর্যবেক্ষকের। আর কেবল মাত্র এর লাভ ক্ষতি জানার জন্য এর দায় শোধ করতে হয় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে! আসল সত্য এই তিন বিজ্ঞান কখনো জনকল্যাণে চর্চিত হয়নি, চর্চিত হয়েছে শাসকদের প্রয়োজনে ও অনুকম্পায় এবং তাদের পোষ্য জ্ঞানগর্ধভদের দ্বারা ।
বিজ্ঞানের সীমাহীন উন্নতি আমাদের দিয়েছে অপরিমেয় ধ্বংস ও সৃষ্টির ক্ষমতা। আমাদের ধ্বংসের ক্ষমতা কার্যক্ষেত্রে যে পরিমানে বিকশিত ও প্রকাশিত হয়েছে সেই তুলনায় সৃষ্টির ক্ষমতা অব্যবহৃতই থেকেছে যদিও ভোগ বিলাসে এর কিছু প্রয়োগ হয়েছে বাণিজ্যিক কারণে। তত্ত্বগত ভাবে মানব জ্ঞান মানব জাতির যৌথ সম্পদ হলেও তার মালিকানা এখন কর্পোরেট বেনিয়াদের। তাই জ্ঞান কখনও মানব কল্যাণে ব্যবহার হয়নি, নানা বাদ-মতবাদ ও টাকা-ক্ষমতার তাঁবেদার করে রাখা হয়েছে নানা কৌশলে, ব্যবহৃত হয়েছে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-ক্ষমতার স্বার্থে। মানব জ্ঞান মানব কল্যাণে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা গেলে মাত্র সাতশ কোটি মানুষের জন্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি আসলেই স্বর্গসম হত! পৃথিবীতে অভাব বা সমস্যা বলে কিচ্ছুই থাকতনা। মানুষ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে অভাব মেটানোর কৌশল বহু আগেই রপ্ত করলেও বর্তমান পৃথিবীর শোষন-শাসন কাঠামোর অদৃশ্য জিঞ্জিরে শৃংখলিত অধিকাংশ মানুষকে গরীব করে রেখে তাদের রক্ত ঘামে পুঁজিপতির গতর বাড়ে আর বাড়ে কিছু মানুষের বিত্ত বৈভব অপরদিকে দারিদ্র নামক অদৃশ্য ক্যানসার দিনে দিনে বাড়তে থাকে যার নীল বিষে জর্জরিত এই বিশ্বের অধিকাংশ বাসিন্দা আর বর্তমান বিশ্বের কৃত্রিম এই দারিদ্র পুঁজির সচেতন ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলের ফসল। যদিও কিছু ভাড়াটে জ্ঞানীদের দিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব, তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে এবং ভুঁইফোঁড় মিডিয়ার কল্যাণে 'দিনে দিনে দারিদ্র কমছে' এমন ধারণা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে যা এক ধরনের ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই না। প্রচলিত ধারণায় মাথা পিছু আগের চেয়ে ভোগ বৃদ্ধিকে দারিদ্র হ্রাসের প্রধান লক্ষণ বলে বিবেচিত হলেও মাথা পিছু উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। যদি একজন মানুষের ন্যায্য প্রাপ্যতার তুলনায় সে কতটা পাচ্ছে তার ভিত্তিতে দারিদ্র পরিমাপ করা যেত তাহলে দেখা যাবে আমরা প্রতিদিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছি, আর আমাদের ধন চুরি হয়ে চর্বি জমাচ্ছে অন্যের পেটে!

You may like:

এখানে বেঁচে থাকাটাই মহাকাব্য!

কোন রকমে বেঁচেবর্তে থাকার জন্য একটা চাকরি বা কাজ পাওয়া আজকাল শুধু সোনার হরিণই নয়রীতিমত যেন ইউরেনিয়ামের হরিণ। চারিদিকে হাহাকারশুধু নাই নাই আর নাই। লক্ষ মেধাবী তরুণ বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে কাজের অভাবেনীরবে ঝরে যাচ্ছে হাজারো সম্ভাবনা। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পেরলেও উৎকৃষ্ট মানের চাকর তৈরির লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে যে শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু তার গতরে লাগেনি আজো কোন মৌলিক পরিবর্তনের ছোঁয়া। লুণ্ঠন আর নির্যাতনের হাতিয়ার থেকে এখনো আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কল্যাণ মুখী হয়ে উঠতে পারেনি। আমাদের রাষ্ট্র বা শিক্ষা কোন ব্যবস্থাই আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে বিকশিত হবার জন্যে সহায়ক নয়। প্রাকৃতিকসামাজিক ও জ্ঞান সম্পদের উপর সম অধিকার মানব কুলের জন্মগত মানবাধিকার হলেও অল্প কিছু মানুষ বা শক্তি সব কিছু কুক্ষিগত করে রেখেছে নিজের করেযেন আর কারো কোন অধিকার নেই। মানুষের রক্ষা কবচ না হয়ে রাষ্ট্র যেন রাক্ষসদের পক্ষ নিয়েছে! আর এজন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে শিক্ষা ব্যবস্থাও সেভাবে সাজানো যাতে মানুষকে এই অদৃশ্য রাক্ষসরা অনায়াসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হয়তো ‘স্মার্ট চাকর’ তৈরি করতে পারেকিন্তু এমন মানুষ তৈরি করতে পারেনা যারা শিক্ষা জীবন শেষ করে কাজের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকেনাচাকুরী না পেলেও তাদের শিক্ষা জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়না। অথচ আজকের যে বেকার সন্তানটি পরিবারসমাজ ও দেশের বোঝাসামান্য সুযোগ পেলেই উল্টো সে নিজেই টানতে পারে পরিবারসমাজ বা রাষ্ট্রের বোঝা।
অল্প কিছু সাহসী মানুষই এর বিরুদ্ধ স্রোতের মুখে মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছেদাঁড়াচ্ছে ও দাঁড়াবে। এই মানুষগুলোই আমাদের সভ্যতার প্রগতিকে নিত্য শক্তি যোগাচ্ছে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য। এই শক্তি জোগানো মানুষগুলোই এন্টারপ্রেনর বা স্বউদ্যোক্তা। এরা চাকুরী বা কাজ খোঁজেনকাজ তৈরি করেনিজের জন্যেঅন্যের জন্যে আবার দেশের জন্যেও। বাদবাকিদের অধিকাংশই কোন রকমে বেঁচে থাকে পরিবারসমাজ ও রাষ্ট্রের কৃপায় বা বোঝা হয়ে। এন্টারপ্রেনর জন্মায় নাজন্মে সৃষ্টি হয়তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাই তাকে তৈরি করে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বল্পমধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদী রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন নীতি-কাঠামো এন্টারপ্রেনর সহায়ক হলে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী অন্যের মুনাফা সৃষ্টির হাতিয়ার না হয়ে প্রকৃতপক্ষেই মানবসম্পদে পরিণত হবে । আমাদের স্বাভাবিক জীবনধারায় একটা বয়স পর্যন্ত কেউ জিজ্ঞাসা করেনা সে কি করেকিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে চারিদিকের জিজ্ঞাসা ও মাথায় দু: চিন্তা দুটোই বেড়ে যায়। একটা কিছু করতে হবেকিছু একটা করা দরকার! এমন টানাপোড়ন এর সময় শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার জীবনেই আসে। যারা সোনার চামচ হাতে-মুখে-পকেটে বা ব্যাংকে নিয়ে জন্মায় তাদের কথা আলাদা। নিকট অতীতেও আমাদের পুরব পুরুষদের পেশা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নিউত্তরাধিকার সূত্রে কৃষকের ছেলে কৃষককামারের ছেলে কামার তেমনিভাবে সুতার-মজুরদের ছেলেরাও পিতার হাল ধরত। কৈশোরে প্রকৃতির হাতে জীবন যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করে কমে প্রবেশের জন্য এখন দরকার কেবল একজন কিশোরী বধূব্যস হয়ে গেল ছেলে সংসারী! জিবনযুদ্ধের ময়দানে আরেকজন সৈনিক বাড়ল। প্রকৃতির মতই সরল জীবনের পর্যায়গুলো। কিন্তু হাল আমলে আমাদের সনাতনী পেশাগুলো আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়কেবলমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর জীবন ব্যবস্থা আমাদের লালন করতে দৃশ্যত অক্ষম হলে এবং অপরদিকে বাজার অর্থনীতির পরিকল্পিত ও ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনে শুরু হয় পেটের টানে ঘর ছাড়ামানুষ নিজের এলাকা ছেড়ে দূর থেকে দূরতম স্থানে চালিয়েছে দুঃস্বাহসি অভিযাননিজের জীবন দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে গেছে তাদের আহরিতই সম্পদ ও জ্ঞান যার ফলাফল আজকের এই সুন্দর পৃথিবী।
এই যে “এখনো কিছু করিনা” পর্যায় থেকে “এখন কিছু করি” এই পর্যায়ে রূপান্তরের পরিবেশ ও শর্তাবলী তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু নির্মম সত্য হচ্ছে স্বাধীন ভাবে নিজস্ব সম্ভাবনা বিকাশের প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থসামাজিক পরি-কাঠামো কোনটাই বিদ্যমান না থাকায় আমরা শেষ পর্যন্ত যা কিছুই করিনা কেন তা প্রায় সম্পূর্ণটাই ‘চান্স’ বা সুযোগ নির্ভর। নিজের চাওয়া বা পরিকল্পনা মাফিক চাকরি বা কাজ খুব কম মানুষের কপালেই জোটে। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি-কাঠামো বা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘এখনো কিছু করিনা’ পর্যায় থেকে ‘এখন কিছু করি’ পর্যায়ে রূপান্তরের জন্য মাঝখানে ‘এখন কিছু করব’ এই পর্যায়ে সংযোগের কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। ফলে কেউ কিছু করতে চাইলেও তার সুযোগ খুবই কমআমাদের কর্মজীবনে প্রবেশের পথ নির্মমবন্ধুর ও প্রকৃতি বা ‘চান্স’ নির্ভর। কিন্তু যারা যে কাজে দক্ষ বা যে কাজে যে আনন্দ পায় সেই কাজ যদি প্রচলিত আইনের সাথে সংঘাতপূর্ন না হয় তবে তা করার অধিকার আমাদের অন্যতম মৌলিক অধিকার-জীবনের প্রতি অধিকার, মর্যাদার সাথে বেচে থাকার অধিকার যা মহান সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ দ্বারা সুরক্ষিত আছে (“প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্রযেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবেমানব সত্ত্বার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে”)। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল শর্তাবলী নিশ্চিত করণ ও তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্র দায় বদ্ধ।

You may like:

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও আমরা বোকা বান্দা!

আমেরিকার অর্থনীতি অহেতুক সমৃদ্ধ বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় ডলার নির্ভরতার কারণে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট বিজনেস হাউজ এবং ব্যক্তি আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচুর ডলার রিজার্ভ রাখে; ফলে আমেরিকার সব ব্যাংকেই বিশেষ করে বড় বড় ব্যাংক গুলিতে ঋণ দেবার মত অঢেল অর্থ থাকে। ব্যাংক গুলি বিভিন্ন নামে ও কৌশলে জনগনের মধ্য অতি সহজে বিপুল পরিমান ঋণ বিতরণ করে, ফলে জনগনের হাতে খরচ/ভোগ করার জন্য প্রচুর অর্থ আসে। এর ফলে জনগনের গড় ভোগ বেড়ে যায় সকল ক্ষেত্রেই। আর হাতে অথের্র সমাগম থাকায় কমের্র ও সৃষ্টি হয় ব্যাপক। এভাবেই আমেরিকার জনগন অন্যের অর্থে (বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগনের) ভোগ বিলাস করে আসছিল; মুলত মুদ্রা ব্যবস্থার কারণেই নিরবে এই ঘটনা ঘটে আসছিল।
ব্যাংক গুলির হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় তারা প্রাইম ও সাব প্রাইম মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের মচ্ছব চালায়। স্বাভাবিক ভাবেই জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রচুর আমদানীও করতে হয়। আবার এই আমদানী যেসব দেশ থেকে করা হয় ঐসব দেশের অর্থই আমেরিকার ব্যাংকগুলির মাধ্যমে জনগনের হাত হয়ে আমদানীতে ব্যবহৃত হয়। মানে যাদের অর্থ তাদের কাছ থেকেই কেনা আবার তাদের অর্থেই, অর্থাৎ অথের্র মালিক বা উৎপাদক একজন আর ভোক্তা আরেকজন (!)। বিশাল এক মিথ্যের ওপর দাড়িয়ে থাকা আমেরিকার অর্থনীতি। খুব সহজে ঋণ পাওয়া যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে কারোরই ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা নয় কারণ প্রত্যেকেরই ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, পুরাতন ঋণ পরিশোধ করে অধিক পরিমানে নতুন নতুন ঋণ গ্রহণ, কই এর তেলে কই ভাজা আর কি! (বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট !!)। ব্যাংক গুলোও বছর শেষে বিপুল মুনাফা করে, ব্যাংক কর্মীরা উচ্চ হারে বেতন-বোনাস পেতে থাকে; চারি দিকে বাহ্‌ ! বাহ্‌ !!
উৎপাদনের অর্থনীতিতে ঋণ জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। এই প্রয়োজন থেকেই ব্যাংক নামক মধ্যসত্ত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের জন্ম যাদের মূল ঘোষিত কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মাঝে সংযোগ ঘটিয়ে ঝুকি হ্রাসের বিনিময়ে উদ্ভুত মুনাফার একটা অংশ ভোগ করা। এই সরল সমীকরনে ব্যাংক এর জন্ম হলেো কালক্রমে ব্যাংক নিজেই তো বটেই মাঝখানে আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয় ঐ ঋণকে কেন্দ্র করে আরো ব্যবসা ক্ষেত্রের জন্ম হয় যা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত। এদর আবার কিছু কিছুর নৈতিক বা আইনহত কোন ভিত্তিই নেই, যেমন হেজ ফান্ড।
ব্যাংক উদ্বৃত্ত তহবিল সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ঋণ হিসাবে বিতরন করে, বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমান সূদ পায়, অপরদিকে তহবিলের মালিককে ঐসূদ হতে কিছু কম সূদ দেয়। এই সূদের হারের ব্যবধান হতেই ব্যাংক তার পরিচালন ব্যায় মিটিয়ে মুনাফা করে। কিন্তু ব্যাংক ঋণ প্রদানের পর ক্রমে তাকে নিভর্র করে কাল্পনিক হিসাব সর্বস্ব আর্থিক লেন-দেন ব্যবস্থা গড়ে উঠে যা রীতিমত জুয়া খেলা। যদিও পুঁজিবাদীরা এই জুয়া খেলাটিকে ফাইনান্স, বিনিয়োগ, ষ্টক ব্যবসা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর নামে অভিহিত করেন। একটা পরিসংখ্যান দিলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে; ২০০৬ সালে সমগ্র পৃথিবীর মোট অর্থনৈতিক উৎপাদন ছিল ৪৭ ট্রিলিয়ন মা:ডলার। অথচ বিশ্বের শেয়ার বাজারের মুলধনীকরণ হয়েছে ৫১ ট্রিলিয়ন মা:ডলার, আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বন্ডের মূল্য ছিল ৬৮ ট্রিলিয়ন মা:ডলার, অন্যান্য আর্থিক দলিলের মূল্য ছিল ৪৭৩ ট্রিলিয়ন মা:ডলার। ৪৭ ট্রিলিয়ন মা:ডলার এর বাস্তব এই উৎপাদনকে কেন্দ্র করে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের নামে যে জুয়া খেলা হয়েছে তা প্রধানত আমেরিকায় বা আমেরিকান নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষের খুব একটা নিয়ন্ত্রন ছিলনা বা এখনো নেই।
এই অন্যান্য আর্থিক দলিলগুলোর জন্ম হয় ব্যাংকগুলি ঘড়-বাড়ি বা মূল্যবান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ দেবার পর সেই ঋণকে সিকিউরিটিতে পরিণত করে যার নাম Mortgage Based Securities (MBS). বিনিয়োগকারীদের নিকট এই সিকিউরিটি বিক্রয় করে ব্যাংকগুলি আবারও ঋণ বিতরণের তহবিল সংগ্রহ করে। অর্থনীতির নৈতিকতায় কোন উৎপাদন বা মূল্য সংযোজন ছাড়া মুনাফা সৃষ্টির কথা নয়, কিন্তু এই ক্ষেত্রে মুনাফা এবং অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায়। কিন্তু ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট হিষ্ট্রী না জেনে বিনিয়োগকারী সেই MBS এর উপর যাতে আস্থা রাখতে পারে এই সমস্যা সমাধানে আবির্ভাব হলো আরেক মধ্যসত্ত্বভোগী-ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারের-Special Investment Vehicle বা SIV| SIV কোন এক বা একাধিক ব্যাংকের SIV গুলোকে কিনে নিয়ে সেগুলোকে একত্রিত করে আবার ঋণের ঝুঁকি অনুসারে ৩ টি ভাগে ভাগ করে:
১) ইকুইটি Equity Bond)-উচ্চ ঝুকিপুর্ন
২) মেজানাইন বন্ড (Mezanine Bond)-মধ্যম ঝুকিপুর্ন
৩) ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড (Investment Grade Bond)-কম ঝুকিপূর্ন
এভাবে মর্টগেজগুলোকে বিভিন্ন স্তরে বিভিক্ত করে ঋণের ঝুঁকি কোন একটি ব্যাংকের কাছ থেকে একাধিক বিনিয়োগকারীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে বন্ডগুলো তৈরী করা হলো এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় CDO বা কোল্যাটারাল ডেট অবলিগেশান। ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক বন্ড থেকে হয় ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড। দুর্বল ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক ( যে মর্টগেজকে বলা হয় সাবপ্রাইম মর্টগেজ) বন্ডকে বলা হয় ইকুইটি বন্ড। মেজানাইন বন্ডের অবস্থান মাঝামাঝি। ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডের ঝুঁকি কম বলে সহ্‌জেই তার ক্রেতাও মেলে কিন্তু ঝুকিবহুল ইকুইটি বা মেজানাইন বন্ড নিয়ে হয় আসল খেলা!
এই পর্যায় প্রথম ধাপের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোই বিভিন্ন ভাবে এই হেজ ফান্ড গঠন করে উচ্চ ঝুঁকির CDO গুলো নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য। যেহেতু ঝুকি বেশী তাই CDO গুলিতে বিনিয়োগে লাভও বেশী ফলে হেজ ফান্ডে বিনিয়োগকারীরও অভাব হয়না, বিভিন্ন উৎস থেকেই সে ফান্ড পায়। যে বাড়িটির মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে ইকুইটি বন্ডের যাত্রা শুরু সেই বাড়ির মূল্য আরও বাড়বে এই আশায় উচ্চঝুঁকির ইকুইটি বন্ডগুলোর দাম বাড়তে থাকে।
ব্যাংক যেমন তার ঝুঁকি SIV-গুলোর উপর দিয়ে দেয়, এসআইভি-গুলো যেমন তার ঝুঁকি হেজ ফান্ডের উপর দিয়ে দেয়, হেজ ফান্ডগুলোও তেমনি সেই ঝুঁকিপূর্ণ বন্ডগুলো কোন ব্যাংকের কাছে জমা রেখে ব্যাংক থেকে ধার করে এবং সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ করে। ইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য যত বেশী হবে হেজফান্ড তার বিনিময় ব্যাংক থেকে তত বেশী অর্থ পাবে। সিডিও-গুলোর আসল ভিত্তি যে বাড়িটি, এতগুলো ধাপ পেরিয়ে এসে সেই বাড়ির মূল্যের সাথে আর বাঁধা থাকেনা সিডিও-এর মূল্য। ব্যাংকগুলো ও হাউসিং মার্কেট চড়া থাকার কারণে এবং ভবিষ্যতে আরও চড়া হলে এগুলো বিক্রি করে প্রভূত মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় নির্দ্বিধায় অতিমূল্যায়িত সাব-প্রাইম মর্টগেজ এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিডিও-গুলোর বিনিময়ে ঋণ দিতে থাকে। সেই টাকায় হেজ-ফান্ডগুলো এসআইভি-এর কাছ থেকে বেশী বেশী সিডিও নিতে থাকে, ১ম ধাপের ব্যাংকগুলোও মর্টগেজের কালি শুকানোর আগেই তার সমস্ত ঝুঁকি সহ মর্টগেজগুলোকে এসআইভি এর হাতে স্থানান্তরের সুযোগে আরো বেশী বেশী করে সাব-প্রাইম ঋণ দিতে থাকে। এ এক ভানুমতির খেল।
এভাবেই কাল্পনিক হিসাবের উপড় ভড় করে অধিক লাভের প্রত্যাশার বেলুন একেবারে আকাশে উঠতে থাকে। কিন্তু সাব-প্রাইম ঋণ উচ্চসুদের হওয়ার কারণে এবং অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এর গ্রহীতা হওয়ায়, একসময় দেখা যায় তারা আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না (ঠিক বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট গ্রহীতাদের মতই!)। স্বাভাবিক ভাবেই সাব-প্রাইম মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিকিউরিটিগুলোর বর্তমান মালিক (ব্যাংক বা কোন ব্যাক্তি বিনিয়োগকারী) যখন বাড়িটি বিক্রি করতে চাইলো তখন সবাই মিলে বাড়ি বিক্রিকরার হিড়িকের কারণে সে উপযুক্ত মূল্য পেলনা এমনকি তার হাতে থাকা সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করতে গিয়েও সে ক্রেতা পেল না। কেননা কেউই তখন জানেনা এই সিকিউরিটিস এর ভিত্তি মূল্য আসলে কত। যখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় চলছিল, তখন কেউ ভিত্তিমূল্যের যথার্থতা নিয় পে্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু সাবপ্রাইম ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়া এবং হাউসিং বাজার পরে যাওয়ার কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের সিকিউরিটিগুলো আক্ষরিক অর্থেই টয়লেট পেপারে পরিণত হলো। কেননা এর আর কোন মূল্য নেই, ভবিষ্যতে উচ্চমূল্য পাওয়ার আশা না থাকায় কেউ আর এগুলো কিনতে চাইছে না।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল নিয়ন্ত্রণের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, আসলে এই শিথিল নিয়ন্ত্রন আমেরিকার অজ্ঞাতে নয় বরং জ্ঞাতসারে এবং পরিকল্পিত ভাবে। অবশ্য এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশী প্রচেষ্টার দরকার হয়নি, বৈশ্যিক মুদ্রা ব্যবস্থার ফলে বরং তাদের ঘড়ের দুয়ারে এসে সুযোগ ধরা দিয়েছে। সেই সুযোগে তারা হয়ে গেছে আমানতের খেয়ানতকারী। আমেরিকা তার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের অথের্র নিরাপত্তার বদলে নিজ দেশের জনগনের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা করেছে, তাই রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকা তার জনগনের কাছে বাহবার দাবীদার তো বটেই!
বর্তমান এই নিয়মবদ্ধ আর্থিক অনাচারের ফলে পৃথিবীর উৎপাদন ভোগ করে যারা ন্যায্যত তারা তার প্রাপক নয়, কেবল মাত্র বৈশ্বিক লেন দেন ব্যাবস্থায় ডলার ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই আমেরিকায় অর্থনৈতিক ফানুস গড়ে উঠেছে। এই সমস্যার ন্যায় সঙ্গত সমাধান আমেরিকার ব্যাংকে জমাকৃত বিভিন্ন দেশের ডলার রিজার্ভ ফিরিয়ে আনা, যদিও তা এই মহুর্তে সম্ভব নয়। তাই ইউরোর মত আরো বিভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রার প্রচলন করা দরকার তাতে অন্তত কিছুটা ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। যদিও তাতে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক কেয়ামত হয়ে যাবে আর তা হওয়াও উচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আমেরিকার ব্যাংকগুলিতে অন্যান্য দেশের ন্যায় একই নিয়মে শ্রেনীকরন করা হয় তাহলে সম্ভবত সর্বোচ্চ শ্রেনীকৃত ঋণের দেশে হবে আমেরিকা।
যে সংকট আজ বিশ্বপুঁজিবাদকে ছাড়খার করে দিচ্ছে তার সূচনা ইউএসএ তে ২০০৭ এর গ্রীষ্মকালে আবাসন শিল্পের ফানুস ফাটতে শুরু করার মধ্যে দিয়ে হয়নি। বরং ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটার পর একটা মন্দা এসেছে যথা ১৯৬৭. ১৯৭৪, ১৯৮১, ২০০১ এর মন্দা। দশকের পর দশক ধরে একটা স্থায়ী এবং মহামারীর মত সংক্রমণে পরিণত হয়েছে, শোষিত মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেমে এসেছে পাহাড় প্রমাণ আক্রমণ।
পুজিঁবাদে যা কিছই ঘটুক না কেন তার ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় খেটে খাওয়া মানুষ। এবারের মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিতেও তাই ঘটছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় চাকরি হারিয়েছে ৬ লক্ষেরও বেশী শ্রমিক, গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং সবশেষে এই যে প্রাইভেট লোকসানের জাতীয়করণ তার খেসারতও বহন করতে হবে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে এভাবে বেসরকারী লোকসানের সরকারী দায় গ্রহন সম্পর্কে Financial Times এর কলামিস্ট Willem Buit বলেন, "বর্তমান বাস্তবতা কি এমন যে, লগ্নীপুঁজি নিয়ন্ত্রীত অর্থনীতিতে যখন সবকিছু ভাল চলে, তখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বেসরকারী মুনাফা কামায় আর যখনই কোন সমস্যা হাজির হয় তখন সাময়িক ভাবে সেই সমস্যাগ্রস্থ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক সরকারীকরণ করা হয়, যার ফলে সমস্ত লোকসানের দায়ভার বহন করে জনগণ? তাই যদি হয়, তবে এগুলোকে চিরস্থায়ীভাবেই জাতীয়করণ করা হচ্ছে না কেন? "
স্বভাব গুণে বা দোষে যাই হোক, পুঁজির স্বভাব হলো ছড়িয়ে পড়া, মুনাফা হয়ে আত্মস্ফীতি ঘটানো। পুজির আন্তর্জাতিক স্বভাব এর প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশ হল আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক এবং একটু দূর অর্থে জাতিসংঘ। পুঁজির সাধারণ স্বার্থ হলো - বাজার অন্তহীনভাবে বেড়ে চলতে হবে, তার জন্য অন্তহীনভাবে প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি করে চলতে হবে। বাজার নিরন্তর বাড়া মানে মুনাফায় আত্মস্ফীত পুঁজিকে পুনঃ পু্‌নঃ বিনিয়োগে বসার জায়গা করে দেওয়া। একাজে দেশ, রাষ্ট্র, কনষ্টিটিউশন, বাউন্ডারী ইত্যাদি সব বাঁধা হটিয়ে একাকার করে সামনে এগিয়ে বাজারকে, ভোক্তা সৃষ্টিতে নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে। বাজার বাড়লে যে কোন ম্যানুফ্যাকচারিং ট্রেড, উৎপাদনে বাড়তে পারবে।
বর্তমান সাম্রজ্যবাদী অর্থনীতি উৎপাদন ও বিনিময়ের এক বিশ্বব্যবস্থা যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত মূল্যের বৈশ্বিক উৎপাদন হয়। আর এই উদ্বৃত্ত মূল্য উৎপাদনের নিরিখে ফাইনন্সিয়ালাইজেশান একদিকে বিশ্বপুঁজিবাদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যদিকে পরজীবি একটি প্রক্রিয়া। পরজীবি- কেননা এটি কোন উদ্বৃত্ত তৈরী করেনা বরং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উদ্বৃত্তে ভাগ বসায়। উদ্বৃত্ত মুনাফার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীভবন এবং তার মাধ্যমে মুনাফা তৈরীর নতুন রাস্তা তৈরী করা ও দ্রুত পুঁজি লগ্নি করে মুনাফা তুলে নেয়া আর ঝুঁকি দেখলে আরও দ্রুত সেই লগ্নি পুঁজি প্রত্যাহার করে নেয়া। এর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত লগ্নী পুঁজির স্বল্পমেয়াদী আগমন ও বহির্গমণের মাধ্যমে কোন একটি দেশের স্থানীয় পুঁজিকে বশবর্তী রাখা ও পুঁজির পূণর্বিন্যাস ও নিয়ন্ত্রণ করা। আর এই ধরণের আর্থিক শৃঙ্খলা তৃতীয় বিশ্বের সবগুলো দেশের উপরেই আরোপ করা হয় এবং হচ্ছে। আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ যাতে মূল চালকের ভূমিকা পালন করে কার্যত আমেরিকান তথা পুজিবাদের স্বার্থ সংরক্ষন করে চলেছে।
বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ কে অনেকেই বলেন "আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান", এটা একেবারেই ভুল একটা ধারণা এবং বড় ধরণের ভ্রান্তি। যার প্রমাণ হলো বিশ্বব্যাঙ্ক এর সুদের হার ১% এর নীচে বা বিনাসূদে, বেশীর ভাগ চুক্তিতে দেখা যায় তা ০.৭৫%। চুক্তিতে আবার, আসল পরিশোধের সময়ও থাকে বেশ লম্বা, কমপক্ষে ২০ থেকে ৩৫ বছর। "অর্থলগ্নী" বা অর্থ লাগানো বা টাকা খাটানো বলতে আমরা যা বুঝি টাকা খাটিয়ে মুনাফা কামানো বা সুদি ব্যবসা। কিন্তু মুনাফা কামানো বা সুদের ব্যবসা বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ এর ঘোষিত বা অঘোষিত লক্ষ্য কোনটাই নয়।
১% এরও কম সুদে ২০-৪০ বছর দীর্ঘ মেয়াদী কোন ঋণকে "ফিনান্স ক্যাপিটালের" বিনিয়োগের মূল ফোকাস হলো- এর শর্তাবলী। বিশ্বব্যাঙ্ক হলো সব রূপের পুঁজির আরাম করে বসার কুশন তৈরির প্রতিষ্ঠান। সব ধরণের পুঁজি যাতে আরাম করে বসে স্ব স্ব কারবার করতে পারে তার পরিবেশ, শর্ত তৈরি করাই এর কাজ। ঐদেশের আইন, কনষ্টিটিউশন, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, স্বাথের্র হাত মুচড়ে ধরে, প্রয়োজনে এর বদল ঘটিয়ে গ্লোবাল পুঁজির জন্য সুবিধাজনক আদল দেয়া, শর্ত ও পরিবেশ তৈরি করাই বিশ্বব্যাঙ্কের কাজ। এই কাজটা করতে বড় ধরণের ঋণ / বিনিয়োগ লাগে, তা সে করে। সবচেয়ে কম সুদে (০.৭৫%) এবং দীর্ঘ মেয়াদী ২০-৪০ বছর এবং কঠিন ও বিরাট শর্ত দিয়ে। সবকিছু সংস্কার, বদল করার শর্ত। ঋণে শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন মানে হাত মুচড়ে ধরার ক্ষমতা। এই বিরাট অঙ্কের ঋণ / বিনিয়োগের লক্ষ্য মুনাফা কামানো নয়, শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন। বরং লগ্নিপুঁজিসহ সবধরণের পুঁজি যাতে কারবার করতে পারে তার আয়োজন করার ক্ষমতা অর্জন।
পাঁচটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ গঠিত, যা সংক্ষেপে বিশ্বব্যাংক নামে পরিচিত। এই পাঁচটার মধ্যে যার তৎপরতা সবচেয়ে ব্যাপক, সবচেয়ে প্রাচীন এর নাম হলো IBRD (International Bank Reconstruction & Development)। অথবা The Bank । বিশ্বব্যাঙ্কের লোন বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তা মূলত IBRD এর লোন। IBRD এর জন্ম সবার আগে, তখন বিশ্বব্যাঙ্ক বলতে এটাকেই বুঝা হত। বাকি চার সহযোগীর জন্ম পরে ধাপে ধাপে। একসাথে এখন তা বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ। এই IBRD এর গঠন প্রকৃতি শেয়ার হোল্ডারদের মালিকানাধীন জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানীরই মতন। তবে তফাৎ হলো, এটা কোন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক নয়।
"স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা দেবার জন্য ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক" - এই কথাটা সত্যি না। মুলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস প্রায় ইউরোপের অবকাঠামো "পুণর্গঠন ও উন্নয়নের " লক্ষ্যে পাঁচটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ গঠিত, যা সংক্ষেপে বিশ্বব্যাংক নামে পরিচিত। কিন্তু দ্রুত ইউরোপের বাজার সংকুচিত হয়ে এলে পুজির স্বার্থেই ১৯৬০ সালের পরে নতুন বাজার খুজতে অপেক্ষাকৃত অননুন্নত এশিয়া-আফ্রিকার দিকে নজর দেয়। যুদ্ধে ইউরোপের অবকাঠামো ধ্বংস হলেও ছিল তাদের দক্ষ জনশক্তি। ফলে ইউরোপে কাজ করা যত সহজ ছিল এশিয়া-আফ্রিকায় তত সহজ ছিলনা। এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বব্যাংক তার ‘অবকাঠামো’ ধারণায় পরিবর্তন আনে। আগে অবকাঠামো ধারণায় উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট শ্রমকে অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হত না, পুঁজির আত্মস্ফীতি ঘটানোর জন্য দরকারী নিয়ামক শক্তি বলেও বিবেচনা করা হত না। শ্রমের অবকাঠামো মানে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়- ১. বিভিন্ন মাত্রার শিক্ষা, দক্ষতার যে শ্রম দরকার, ২. প্রতিদিন কারখানা, কারবারের দরজায় সুস্থ সবল শ্রমিক এর নিরবিচ্ছিন্ন হাজিরা, ৩. বুড়া কর্মক্ষম হয়ে গেলে সমাজের বড় আপদ না হয়ে যায়, ৪. বাচ্চা পয়দা করে, পেলে পুষে বড় করে সামাজিকভাবে নতুন নিরন্তর শ্রম প্রবাহ ইত্যাদি - সবকিছু যেন নিশ্চিত পাওয়া যায় এমন "শ্রমের অবকাঠামো" ও তার জন্য একটা পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ। ফলে তখন থেকেই "অবকাঠামো" উন্নয়নের ধারণা বদলে গিয়ে ফিজিক্যাল কাঠামো ইট কাঠ পাথর এর সাথে যুক্ত হয় - মানব কাঠমোর উন্নয়ন। শ্রমের অবকাঠামো ও ফিজিক্যাল অবকাঠামো উভয়ে মিলে অবকাঠামো ও তার উন্নয়ন। তাই বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় মানুষ ইট কাঠ পাথরের মত প্রকৃত অর্থেই আমরা এক একজন "বেনিফিসিয়ারি" বা object বৈ আর কিছু নয়।
১৯৩০ দশকের মত মন্দা ঠেকাতে আইএমএফ এর জন্ম। আজকে বলা হচ্ছে ২০০৮ এর মন্দা ১৯৩০ সালের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাহলে আইএমএফ রাখার দরকার কী? gold standard ডলার, ডলারের হেফাজত আমেরিকার আর ডলারের সাথে অন্য মুদ্রার বিনিময় হার সি'র থাকবে এটা ধরে নিয়ে যে আইএমএফের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে আইএমএফের ভিত্তিমূলক সে ভাবনাগুলো বর্তমানে মৃত প্রায়, অকেজো। সংগঠন হিসাবে আইএমএফের অসি-ত্ত্ব, ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এক হিসাবে দেখা যায়, ১৯৬০ সাল থেকেই বিভিন্ন দেশকে দেয়া আমেরিকার মোট ঋণ (ডলারে হিসাব করে দেয়া) তার ঘরে মজুদ সোনার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে; অথচ ঐ ডলারের সোনায় বদল করার যোগ্যতা থাকার কথা। আমেরিকা ডলার বদল করে সোনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এককথায়, আইএমএফ দাঁড়িয়ে থাকার ভিত্তিমূলক ভাবনাগুলো সব ধসে পড়ে।
বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে। আগে টাকা ছাপতে ও বাজারে ছাড়ার আগে সমপরিমাণ মুল্যের সোনা ব্যাঙ্কে নগদ মজুদ রেখে তারপর ঐ টাকা বা মুদ্রা বাজারে ছাড়া হত। কাজেই নোট প্রদানকারী বা প্রতিশ্রুতিদানকারী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে এই মুদ্রা বা নোটের সমপরিমাণ সোনা তার কাছে মজুদ আছে। যে কেউ নোটের বিনিময়ে সোনা চাইলে সে তা দিতে বাধ্য থাকবে। এধরনের মুদ্রাকে বলা হয় gold standard মুদ্রা। যে মুদ্রা gold standard নয় সে মুদ্রা দাঁড়িয়ে আছে ফাঁকা রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রতিশ্রুতির উপর। অর্থনৈতিক পরিভাষায় যাকে fiat money বলে। আজকের দিনে প্রায় সব মুদ্রাই fiat money বা স্রেফ রাষ্ট্রীয় ডিক্রি জারির ক্ষমতাগুণে সে মুদ্রা।
আমেরিকা তার রপ্তানী আয়ের ঘাটতি মিটিয়ে নিচ্ছে নিজের ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। আমদানির বিপরীতে ট্রেজারি বিল নামক কাগজ রপ্তানী করছে। এটাকেই পণ্য হিসেবে দাঁড় করিয়ে নিজের আমদানিকে সচল রাখছে। এটা যদি না হত তাহলে আমেরিকার সাথে বাণিজ্যে অংশ গ্রহণকারী দেশের পাওনা মিটাতে আইএমএফকে এগিয়ে আসতে হত। তাদেরকে ধার দিতে হত আর রপ্তানীমুখি খাত সৃষ্টি কারর জন্য পরামর্শ দিতে হতো, প্রকল্প বানাতে হতো! ডলারের সব দোষ জানা সত্ত্বেও আরও বড় ক্ষতির ভয়ে অগত্যা সবাই মেনে নিচ্ছে। হিতে-বিপরীত হতে পারে, কারণ সবাই গভীরভাবে ডলারের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে আছে। একেই বলে গ্যারাকল! এক কেচকিতে পড়া অবস্থা। ফলে এইসব সুবিধা ভোগ করে ডলার টিকে আছে; অন্য কথায় বলা যায় ক্ষতিগ্রস্থরাই আরও বড় ক্ষতির ভয়ে টিকিয়ে রাখছে।
আইএমএফের "রপ্তানিমুখী উৎপাদনের" নীতি আমাদেরকে পাটের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। পাট থেকে মুখ ফেরানোর পক্ষে আইএমএফের হাতে যে যুক্তি লেগে যায় তা হলো, আমাদের পাটকলগুলো লোকসানী, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ফলে এর ব্যয়, দায় মিটাতে সরকারী রাজস্ব আয়ের উপর মারাত্মক চাপ পড়ছে; সরকার চালানোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলো বিক্রি করে দেবার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জুট স্পিনিং মিল যেগুলোর সবই প্রাইভেট কোম্পানী এগুলোকে সরকারী ভর্তুকি দেবার বন্দোবস্ত করা হয়। এই ভর্তুকির টাকা পাটখাত সংস্কার কর্মসূচির নামে সরকারকে ঋণ দেয়া হয়। সরকার সেই ঋণ নিয়ে প্রাইভেট কোম্পানীকে নগদ ভর্তুকি দেয়া হয়।
Foreign Investment Promotion & Protection Act বলে আইএমএফের সদস্যদেশের জন্য একটা আইনের ছাঁচ করা আছে। ঋণ গ্রহিতা দেশের ঋণ পাবার প্রাথমিক শর্ত এটা। ফলে মান্য করা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, শর্ত মেনে ঋণচুক্তি আইএমএফের সাথে করে নিয়ে চলে গেলে হবে না, একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর দেশের সংসদে এ আইন পাশ করতে হবে। বাংলাদেশ ১৯৮০ সালে Foreign Investment Promotion & Protection Act, ১৯৮০ নামে সংসদে এই আইন পাশ করেছে। আইএমএফের টেমপ্লেটেড এই আইনের কারণে বিনিয়োগ সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট দেশকর্তৃক বায়োজাপ্ত হয়ে যাবার বিরুদ্ধে একধরণের রক্ষাকবচ।
Structural Adjustment Facility (SAF) (১৯৮৫) ও পরে নতুন ভার্সানে Enhanced Structural Adjustment Facility (ESAF) (১৯৮৬) - এগুলোর কোনটাই আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। সারা দুনিয়াকে রপ্তানিমুখী করে আকার দিতে Structural Adjustment Facility (SAF) চলেছিল ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৯৯৯ সাল থেকে The Poverty Reduction and Growth Facility (PRGF) এর জায়গা নেয়, যার শেষ এবছরে। আগামি বছর থেকে নতুন প্রোগ্রাম Extended Credit Facility (ECF) নামে যা হাজির হবে। এর বিশেষত্ত্ব ডোনারদের কাছে অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতিতে, তাছাড়া এটা নতুন বোতলে পুরান মালই । এতদিন দাতাদের কাছে থেকে তিন-চার বছরের কমিটমেন্ট/অর্থ সংগ্রহ করে PRGF জাতীয় Facilities চালানো হত। এবারে নতুন পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করা হবে বাজার থেকে; মানে আন্তর্জাতিক বাজারে যারা লগ্নিপুঁজির বিনিয়োগের ব্যবসা করে। স্বভাবতই সুদের হার হবে অনেক বেশি, বাণিজ্যিক ব্যবসার লোনের মত। এই অর্থ ঋণ নিয়ে আইএমএফ আবার ০.৫% সুদে ঋণসুবিধা আকারে বিতরণ করবে - এতে যে লোকশান হবে; অর্থাৎ দুই সুদের হারের যে ফারাক এই সুদ দাতাদেশগুলো দিয়ে দেবে। এতে নিট যা ফারাক, তা হলো, আগে পুরা অর্থ ছিল সরাসরি দাতা রাষ্ট্রের কোষাগারের এখন সে অর্থ আসবে টাকার বাজার থেকে, প্রাইভেট লগ্নিবিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর কেবল এর সুদটা কেবল দাতাদেশের রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে।
পোষাকে কোটা ব্যবস্‌হা আমেরিকান জাতীয় অর্থনীতির পক্ষে একটা উৎপাদনে সুরক্ষা (protectionist) নীতি ও ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা আমেরিকার হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফ আমাদের বেলায় বলছে, আমাদের আমদানি নীতিতে কোন সুরক্ষা নীতি থাকতে পারবে না, অবাধ আমদানির সুযোগ রাখতে হবে। আবার Multi-Fibre Agreement এর মাধ্যমে আমেরিকার protectionist পদক্ষেপ আমাদের মাথা পেতে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এই সব বাস-বতার জন্যই আমাদের দেশে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ইত্যাদি সংস্থা (বা তথাকথিত আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ) আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তথা রাষ্ট্রের সার্বভেৌমত্ব জলাঞ্জলী দিয়ে সংস্কারের নামে তাদের প্রেসক্রিপশন গিলতে বাধ্য করছে। আর বিশ্বপুজিঁ যখন যেভাবে চায় আমরা সেভাবেই তৈরী হতে বাধ্য হচ্ছি । বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ কখনোই গনমানুষের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করেনা বরং দরিদ্র দেশের দরিদ্র মানুষদের দারিদ্রের সূযোগ নিয়ে তাদের অদৃশ্য জিঞ্জিরে বাধা আজন্ম দাসে পরিণত করার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির উচিৎ একসাথে কিছু পদক্ষেপ নেয়া, যেমন:
 ‘Foreign Investment Promotion & Protection Act’ বাতিল/সংশোধন/প্রতিস্থাপন এর জন্য জনমত তৈরী ও সরকারকে চাপ প্রয়োগ।
 IFIs অর্থায়িত বা প্রেসক্রিপশনকৃত প্রকল্পসমূহের Social/citizen audit পূর্বক ক্ষতি (আর্থিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও অন্যান্য) নিরুপণ এবং সে হিসাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
 চলমান এবং প্রক্রিয়াধিন/প্রস্তাবিত সকল প্রস্তাব/প্রকল্পের শর্তাবলী জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দেয়া এবং জনগনের মতামত গ্রহণের কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও তাদের মতামত আমলে নেয়া।
 আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে অভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ক্রমান্বয়ে ডলার নিভর্রতা থেকে সম্পূর্ন বেড়িয়ে আসা।


You may like: